মারধরের ‘বিচার না পেয়ে’ ক্যাম্পাস ছাড়লেন ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আলফাত সায়েম ও আল-আমিন (ডানে)
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হল ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করা ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন। অভিযোগের বিচার না পেয়ে আজ শুক্রবার ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বাড়িতে চলে গেছেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। তবে অভিযোগের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক আল-আমিন ও বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম ওরফে জেমসের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর মারধর করার লিখিত অভিযোগ করেন ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম।

আরও পড়ুন

অভিযোগে ওই ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের অতিথিকক্ষে তুচ্ছ ঘটনার জেরে তাঁকে মারধর করে কান ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। পরে হল প্রাধ্যক্ষকেও একটি অভিযোগ করেন তিনি। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক।

ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রক্টর দপ্তর ও হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আজ বাড়ি চলে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে এসে এভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হবে, ভাবতে পারিনি।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সুষ্ঠু বিচার করে, তাহলে তিনি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসবেন।

মারধরের ঘটনাটি হলের ভেতরের ঘটনা হওয়ায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে প্রাধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ করার পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক। পরে ওই শিক্ষার্থী প্রাধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ দেন।

শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করার পরও ভুক্তভোগী নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। পরে তাঁকেও একটি অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে হলের দুজন আবাসিক শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাল শনিবার তাঁদের চিঠি ইস্যু করা হবে।

ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছিলেন, গত মঙ্গলবার শের-ই-বাংলা হলের পড়ার কক্ষের (রিডিংরুম) পাশে ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন উচ্চ স্বরে কথা বললে তিনি তাঁকে নিষেধ করেন। এ নিয়ে আল-আমিনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় তাঁর। পরে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের নেতা জেমসকে ডেকে এনে হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে তাঁকে মারধর করেন আল-আমিন। মারধরের এক পর্যায়ে তাঁর কান ফেটে রক্ত বের হয়। এ ছাড়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গতকাল রাতে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অসম্পূর্ণ রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা লিখেছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন গতকাল বলেছিলেন, ওই দিন তাঁদের মধ্যে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। তবে মারধরের ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রলীগ নেতা আলফাত সায়েম ও প্রাধ্যক্ষ বিষয়টি সমাধান করে দেন। তৃতীয় পক্ষের প্ররোচনায় সহানুভূতির জন্য নজরুল অভিযোগটি করেছেন। আর অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছিলেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আলফাত সায়েম।