বুড়িচংয়ে উৎসুক জনতার চাপে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত

বন্যা দেখতে যাওয়া উৎসুক মানুষের চাপে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শনিবার বিকেলে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার প্রবেশের মুখে কালখড়পাড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় উৎসুক মানুষের চাপে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া লোকজন বলছেন, মোটরসাইকেলে করে দল বেঁধে একদল যুবক দুর্গত এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। তাঁদের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বুড়বুড়িয়া এলাকায় যেখানে নদী ভাঙছে, সেখানেও উৎসুক জনতার ভিড় লেগেছে।

শনিবার বেলা ১টায় কুমিল্লা-বুড়িচং সড়কের কালখড়পাড়, ভরাসার, ইছাপুরা ও মহিষমারা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উৎসুক জনতার ভিড়। তাঁদের কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে, কেউবা এসেছেন পরিবার নিয়ে। তাঁদের সঙ্গে আসা যানবাহনের চাপে ত্রাণ নিয়ে আসা ট্রাক ও পিকআপকে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান জানান, তাঁরা শুক্রবার থেকে বুড়িচংয়ে আছেন। প্রতিদিন উদ্ধার তৎপরতা এবং ত্রাণ বিতরণ করছেন। মহিষমারা এলাকায় দর্শনার্থীদের কারণে তাঁদের নৌকা ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না।

দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বুড়বুড়িয়া এলাকায় যেখানে গোমতীর বেড়িবাঁধ ভেঙেছে, সেখানে অনেক লোকজন ছবি তুলছেন। কেউ কেউ ভিডিও, রিলস এবং টিকটক ভিডিও তৈরি করছেন। তাঁদের চাপে ভেঙে যাওয়া বাঁধ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ সময় এক স্বেচ্ছাসেবী মঞ্জুরুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার কুমিল্লার বুড়িচংয়ে এত মানুষ এসেছেন যে তাঁদের কারণে বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করা যাচ্ছে না।

মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে ভিড় করছেন উৎসুক লোকজন। বুড়িচং উপজেলার কালখড়পাড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘বন্যা দেখতে আসা মানুষজনের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাইছে। তাঁদের কারণে সময়ের কাজটা সময়ে করা যাচ্ছে না।’

এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া জানান, যেখানে নদী ভাঙছে সেখানেই তাঁর বাড়ি। এখানে প্রতিদিন এত মানুষ আসছেন, তা বলে বোঝাতে পারছেন না। এই মানুষের চাপে বন্যাকবলিত স্থানে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে বাকশিমুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কজুড়ে শতাধিক মোটরবাইক। শহর থেকে তরুণ-যুবকেরা দল বেঁধে এসেছেন বন্যার পানি দেখতে। তাঁদের মোটরসাইকেলের কারণে যাঁরা আশ্রয়ের খোঁজে বাড়ি ছেড়েছেন, তাঁরা বিরক্ত হচ্ছেন। মোটরসাইকেলের আওয়াজে আশপাশে টেকা দায়।

কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে আবু সোহেল ও সোলাইমান হোসেন মোটরসাইকেল নিয়ে বাকশিমুল এলাকায় বন্যার পানি দেখতে গেছেন। তাঁদের হিসাবমতে, ওই এলাকায় ১০০-১৫০ মোটরসাইকেল প্রবেশ করেছে।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার বলেন, ‘এত মানুষ আসে টিকটক করতে, ভিডিও করতে। কতবার ডাক দেওয়া যায়। এসব মানুষের কারণে উপজেলা প্রশাসনের কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’ তিনি অনুরোধ করেন, যাঁরা ত্রাণ দিতে আসবেন, তাঁরা যেন কষ্ট করে হলেও নৌকার ব্যবস্থা করে আসেন। তাহলে একদম দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।