৪ কোটি টাকার সেতুতে উঠতে হয় মই বেয়ে

সেতু এখন উল্টো বিড়ম্বনার কারণ হয়েছে। বাঁশের মই বেয়ে সেতুতে উঠে এরপর আবার মই দিয়ে সেতু থেকে নামতে হচ্ছে।

  • বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বয়স্ক মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।

  • সেতু দিয়ে নদী পার হন ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

  • সেতুতে উঠতে হয় অন্তত ২৫ ফুট উচ্চতার সাঁকো দিয়ে।

গাজীখালী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর এক পাশেও নেই সংযোগ সড়ক। উঠতে–নামতে লাগে মই। ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের নওগাঁও এলাকায়
প্রথম আলো

ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের নওগাঁও এলাকার গাজীখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয় প্রায় তিন বছর আগে। নির্মাণের দীর্ঘ সময় পরও সেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় কার্যত সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। দুর্ভোগও শেষ হচ্ছে না ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের। বাঁশের মই বেয়ে সেতুতে ওঠানামা করতে হচ্ছে তাদের। এতে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বয়স্ক মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ধামরাই কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বৃহত্তর ঢাকা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (৩) আওতায় গাজীখালী নদীর ওপর ৪৫ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। নির্মাণের সময় নির্ধারণ করা হয় এক বছর। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ২১ লাখ ৫৪ হাজার ২৭১ টাকা। সেতুর সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ৬৫৯ মিটার। সেতুর নির্মাণ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।

‘সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সেতুর বিষয়টি তুলে ধরেছি। ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে বলে শুনেছি।’
রমিজুর রহমান রোমা, সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান

সরেজমিনে দেখা যায়, নওগাঁও গ্রামের নওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশরাফ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় এবং নওগাঁও বাজারসংলগ্ন গাজীখালী নদীর অংশটিতে নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি। প্রতিদিন বাঁশের মই বেয়ে সেতুটি পারাপার করতে হয় ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে। এ ছাড়া বাজারসহ নানা কাজে প্রতিদিন একইভাবে সেতু দিয়ে নদী পার হন নদীর উভয় পারের অন্তত ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

স্থানীয় আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সেতু এখন উল্টো বিড়ম্বনার কারণ হয়েছে। বাঁশের মই বেয়ে সেতুতে উঠে এরপর আবার মই দিয়ে সেতু থেকে নামতে হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, নদী পারাপারের জন্য আগে নদীর উভয় পাড়ের নওগাঁও, বাথুলী, বালিথা, ভাটারখোলা, বারপাইকা, কেষ্টি, ভগমানপুর, কড়িখোলাসহ ১০টি গ্রামের মানুষ নৌকা ব্যবহার করত। খেয়ানৌকায় মালপত্র, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল—সবই পার করা যেত। সেতু হওয়ার পর নৌকা চলাচল বন্ধ হয়েছে। এখন সেতুতে উঠতে হয় অন্তত ২৫ ফুট উচ্চতার সাঁকো দিয়ে। বাধ্য হয়ে যাতায়াতের জন্য অনেকে কয়েক মাইল ঘুরে যাতায়াত করছে।

সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এ কে এম সফিউজ্জামান স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক করা হয়নি। এ কারণে নিজেদের উদ্যোগে প্রতিবছর বাঁশের মই তৈরি করে সেতু দিয়ে নদী পারাপারের ব্যবস্থা করছেন স্থানীয় লোকজন।

সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমিজুর রহমান রোমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সেতুর বিষয়টি তুলে ধরেছি। ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে বলে শুনেছি।’

ধামরাই উপজেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন,‘সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর দিকে সেতুর উচ্চতা বৃদ্ধি ও নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। এতে সংযোগ সড়কের আকারও পরিবর্তন হয়। এ কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেনি। এখন আমরা আলাদাভাবে দুটি প্যাকেজে টেন্ডারের মাধ্যমে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছি। আশা করছি, মার্চের মধ্যে এটি শেষ করা সম্ভব হবে।’