টনসিলের অস্ত্রোপচারের পর রোগীর মৃত্যু, তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

জয়পুরহাটে বন্ধন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সদস্যেরা। গতকাল রাতে তোলাছবি: সংগৃহীত।

জয়পুরহাট সদরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে টনসিলের অস্ত্রোপচারের পর এক গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ শনিবার জয়পুরহাট সদর থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলাটি করেন ওই গৃহবধূর স্বামী।

মারা যাওয়া ওই গৃহবধূর নাম রুমা বেগম (২৯)। তিনি উত্তর নুরপুর গ্রামের শামীম আলমের স্ত্রী। রুমা বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক আসাফুদ্দৌলা, তানভীর হোসেন ও আইরিনকে আসামি করে মামলা করেন শামীম আলম।

রুমার স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও টনসিলের ব্যথায় ভুগছিলেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে চিকিৎসার জন্য জয়পুরহাট শহরের পূর্ব বাজারের বন্ধন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে নেওয়া হয়। ওই ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁকে টনসিলে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাঁকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক আসাফুদ্দৌলা ও জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত অবেদনবিদ তানভীর হোসেনের তত্ত্বাবধানের রুমার অস্ত্রোপচার করা হয়। শেষে তাঁকে অচেতন অবস্থায় শয্যায় নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর ছটফট করতে করতে রুমার মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেছেন বলে স্বজনেরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন অস্ত্রোপচারে যুক্ত দুই চিকিৎসক সেখান থেকে চলে যান। খবর পেয়ে থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক আসাফুদ্দৌলা, তানভীর হোসেন ও আইরিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।

আমার স্ত্রী ভুল অস্ত্রোপচারে মারা গেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অন্য চিকিৎসক দিয়ে আমার স্ত্রীর মৃত্যুসনদ লিখেছে। তাতে আমার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেছে বলে উল্লেখ করেছেন। রাতেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি।
রুমার স্বামী শামীম আলম

রুমার স্বামী শামীম আলম বলেন, ‘আমার স্ত্রী ভুল অস্ত্রোপচারে মারা গেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অন্য চিকিৎসক দিয়ে আমার স্ত্রীর মৃত্যুসনদ লিখেছে। তাতে আমার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেছে বলে উল্লেখ করেছেন। রাতেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি।’

এদিকে রুমার মা রোসনা বেগম বলেন, অস্ত্রোপচারের কিছুক্ষণ পর তাঁর মেয়ে ছটফট করতে থাকেন। তখন ক্লিনিকের লোকজন তাঁকে জোর করে বাইরে পাঠিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর এসে দেখেন, রুমার নিথর দেহ পড়ে আছে।

এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন ওই ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক সজীব বসাক। তিনি জানান, ঘটনাটি নিয়ে মারা যাওয়া গৃহবধূর স্বজনদের সঙ্গে তাঁদের আপসরফা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল-মামুন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এখনো আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।