হবিগঞ্জে রাতে সরকারি খাল ভরাট

প্রতিদিন রাতে ট্রাক দিয়ে মাটি ফেলা হচ্ছে এ খালে। খালের পাশে জমির মালিক আমেরিকাপ্রবাসী সুনীল বণিক।

হবিগঞ্জ শহরের বাইপাস সড়কের পাশে কালিগাছতলা এলাকায় সরকারি খালটি রাতের আঁধারে ভরাট করা হচ্ছে। ভরাটের ফলে কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছেছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জ শহরের বাইপাস সড়কের পাশে প্রায় ১০০ ফুট প্রস্থ একটি সরকারি খাল রাতের আঁধারে ভরাট করছেন একজন আমেরিকাপ্রবাসী ও তাঁর লোকজন। এলাকাবাসীর দাবি, খালটি ভরাট হলে ওই এলাকায় বড় ধরনের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এলাকাবাসী জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে খাল ভরাটের কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ ও সরেজমিন দেখা যায়, হবিগঞ্জ শহরের বাইপাস সড়কের পাশে (কালীগাছতলা এলাকায়) সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আধা কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০০ ফুট প্রস্থ একটি দীর্ঘ খাল রয়েছে। খালটি শহরের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম একটি মাধ্যম। এ খালের পশ্চিম পাশের ভূমির মালিক আমেরিকাপ্রবাসী সুনীল বণিক। তাঁর জায়গায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য সরকারি এ খালের প্রায় ২০০ ফুট ভরাট করেছেন তিনি।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন রাতের আঁধারে ট্রাক দিয়ে মাটি ফেলা হচ্ছে এ খালে। বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে হবিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর শাহ সালাউদ্দিনের। গত শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখেন, একসঙ্গে কয়েকটি ট্রাক দিয়ে মাটি এনে খালটি ভরাটের কাজ চলছে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি স্থানীয় পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন।

প্রশাসনের লোকজন তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি ভরাটের আলামত পেলেও মাটি ভরাটকারী ব্যক্তিদের কাউকে পাননি। প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে খাল ভরাটকারী ব্যক্তিরা পালিয়ে যান। তবে এলাকাবাসী প্রশাসনকে জানান, এ মাটি ভরাটের কাজ করছেন শহরের কালীগাছতলা এলাকার বাসিন্দা ও আমেরিকাপ্রবাসী সুনীল বণিক।

হবিগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার শাহ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ খাল সরকারি। খালপাড়ের ভূমির মালিক সুনীল বণিক নামের এক ব্যক্তি তাঁর আত্মীয় দেবব্রত চৌধুরী ও শহরের আনোয়ারপুর এলাকার জয়নাল নামের এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে এ ভরাটের কাজ করছেন। খালটি ভরাট হলে কালীগাছতলা ও এর আশপাশে এলাকার পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে। একটু বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।

সুনীল বণিক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অপর অভিযুক্ত দেবব্রত চৌধুরী ও জয়নাল মিয়ার দাবি, তাঁরা খাল ভরাট করেননি। পাশের নিজস্ব ভূমিতে তাঁরা এ মাটি ফেলছেন।

হবিগঞ্জ সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, খাল ভরাটকারী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সওজের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভরাটের কাজ বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

কালীগাছতলা এলাকার বাসিন্দা অজয় দাস জানান, খালটি শহরের বাইপাস সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত। এ খালটি সওজের। সওজের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে সুনীল বণিকের লোকজন খালটি ভরাট করছেন। অজয় দাস আরও বলেন, ‘খালে যে পরিমাণ মাটি ফেলা হয়েছে, এলাকাবাসীর দাবি, তা উত্তোলন করে এ মাটি নিলামে বিক্রি করে দিয়ে এ খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হোক।’