ঘুষের টাকাসহ আটক সেই অফিস সহকারীকে আদালতে প্রেরণ

ঘুষের টাকাসহ শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে আটক করেন সুনামগঞ্জ জেলা ওষুধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়াকে (কালো শার্ট পরা)। বৃহস্পতিবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে ধরা পড়া ওষুধ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়াকে শিক্ষার্থীরা পুলিশে দিয়েছিলেন। আজ শুক্রবার তাঁর তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, এ–সংক্রান্ত মামলার বিষয়টি দুদকের এখতিয়ারভুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, সব উল্লেখ করেই তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাহিম মিয়ার বিরুদ্ধে নিয়মিত যে মামলা হবে, সেটি দুদক করবে। দুদককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, সব উল্লেখ করে আদালতে পাঠিয়েছি।’

‘এখন পরিস্থিতি অন্য রকম, তাই ঘুষের টাকা একটু বেশি লাগবে’ বলে ফাহিম মিয়া ড্রাগ লাইসেন্স নিতে আসা কয়েকজনকে জানিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী একজন টাকা নিয়ে আসেন। পরে সেই ঘুষের টাকাসহ নিজ কার্যালয়েই হাতেনাতে তাঁকে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। সুনামগঞ্জ জেলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। তবে ওই কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক আবু জাফর তখন কার্যালয়ে ছিলেন না। শিক্ষার্থীরা ঘুষের ১০ হাজার টাকাসহ আটক করেন অফিস সহকারী ফাহিম মিয়াকে। ধরা পড়ে তিনি সব স্বীকার করেন।

ভুক্তভোগী জেলার তাহিরপুর উপজেলার বড়ছরা এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, এলাকায় তাঁর ওষুধ বিক্রির দোকান (ফার্মেসি) আছে। এটির নিবন্ধনের জন্য তিনি কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। আগে ঘুষের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা। সেই অনুযায়ী তিনি শুরুতে ১০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু নিবন্ধনের কাগজপত্র নেওয়ার জন্য দুই দিন আগে যোগাযোগ করলে তাঁকে জানানো হয়, ‘এখন পরিস্থিতি একটু অন্য রকম, বিভিন্ন জায়গায় বেশি টাকা দিতে হয়, তাই ঘুষের টাকার পরিমাণ আরও বাড়বে’। তাঁদের তিনজনের কাছে আরও ১৫ হাজার টাকা করে দাবি করা হয়। তিনি সব শেষে ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। এতেও কাগজ দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি বৃহস্পতিবার ১০ হাজার টাকা নিয়ে ওই কার্যালয়ে যান। এর আগেই তিনি শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানান। আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নেন অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়া। টাকা নেওয়ার পরই সেখানে উপস্থিত হন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা টাকাসহ তাঁকে ধরেন।

ফাহিম মিয়া প্রথমে নিজেকে অফিসের কেউ না বলে দাবি করেন। পরে শিক্ষার্থীদের জেরার মুখে পরিচয় দিতে বাধ্য হন এবং তত্ত্বাবধায়ক আবু জাফর ছুটিতে আছেন বলে জানান। ফাহিম মিয়া নিজের দোষ স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের জানান, এ নিবন্ধন দেওয়ার একটা কমিটি আছে। কমিটির সভাপতি সিভিল সার্জন, সদস্য হিসেবে জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন আছেন। তাঁর দাবি, কমিটির কোনো কোনো সদস্যকে ঘুষের টাকার ভাগ দিতে হয়। গত মাসে কাকে কত টাকা দিতে হয়েছে, তার একটা তালিকাও তিনি শিক্ষার্থীদের দেন। শিক্ষার্থীরা এরপর তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনের জেলা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু জাফর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত ২ মে সুনামগঞ্জে যোগ দিয়েছেন। এ টাকার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁর মা অসুস্থ থাকায় তিনি ছুটি নিয়ে নিজ জেলা বগুড়ায় আছেন।

আরও পড়ুন