ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকের ডালায় ঘরমুখী নিম্ন আয়ের মানুষ

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপের ডালায় বসে ঈদে বাড়ি ফিরছেন দিনমজুরেরা। বৃহস্পতিবার বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কেছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ির ডালায় বসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অধিকাংশই গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় দিনমজুরি করেন। উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কের বিভিন্ন গাড়িতে তাঁরা চড়ে বসছেন। এ ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশের সতর্কতামূলক প্রচারণাও কোনো কাজে আসছে না।

বগুড়ার শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ট্রাক, লেগুনাসহ বিভিন্ন খোলা গাড়িতে মানুষ তোলার কারণে গতকাল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ৫৮টি মামলা হয়েছে। সব মামলা সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর ৮৭ ধারা (অনিরাপদ গাড়িচালনা) ও ৮৯ ধারায় (অনিরাপদ যানবাহন) করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় টহল দিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে আসা বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক ও লেগুনার ডালার মধ্যে ঈদে ঘরমুখী মানুষকে ফিরতে দেখা গেল। নারী-পুরুষের মধ্যে শিশুরাও আছে।

কয়েকটি গাড়ির পিছু নিয়ে দেখা যায়, গাড়ির ডালায় বসা যাত্রীদের কেউ শেরপুরের সীমাবাড়ি বাজার, ধুনট রোড, নন্দীগ্রাম রোড এলাকায় নামছেন। আবার কেউ কেউ বগুড়ামুখী সড়ক ধরে চলে যাচ্ছেন।

শেরপুরের নন্দীগ্রাম সড়কে নামা সাইফুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন এবং ধুনটের লোকমান আলী ও লিয়াকত হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। জানান, তাঁরা সবাই দিনমজুর। টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেন। ঈদের জন্য বাড়িতে যাচ্ছেন। খরচ কমাতে তাঁরা গাজীপুর থেকে এসব গাড়িতে উঠেছেন। বাসে ফিরতে হলে কয়েক গুণ ভাড়া গুনতে হতো। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও খরচ কমাতে তাঁরা প্রতিবছর এভাবেই যাতায়াত করেন।

পণ্যবাহী ট্রাকের ডালায় ফেরা নাটোর, বগুড়া ও গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকার পাঁচ যাত্রী বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দিনমজুর হিসেবে টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের এলাকায় কাজ করেন। প্রতিবছর ঈদে বাড়ি ফিরতে তাঁরা এ ধরনের গাড়িতে উঠে বসেন। এতে তাঁদের খরচ অনেক কম লাগে।

বগুড়া বাস, মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির শেরপুরের সাধারণ সম্পাদক সেলিম হোসেন বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকে এভাবে মানুষ আসা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে অনেকের প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়। যেসব স্থানে তাঁরা গাড়িতে ওঠেন, সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর হলে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা কমে যাবে।

শেরপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পণ্যবাহী ট্রাক ও লেগুনায় ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রাকে নিরুৎসাহিত করতে তাঁরা কয়েক দিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছেন। এ নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপরও যেসব গাড়িতে এভাবে মানুষ আসছেন, তাঁদের সতর্কতামূলক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।