বয়সের ভারে আগেই নুইয়ে পড়েছেন ৯০ বছর বয়সী খোকারাম বর্মণ। এর মধ্যে শীতের প্রকোপে আরও কাবু হয়েছেন। শীত নিবারণের জন্য একটি কম্বল পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা যায় তাঁকে। তিনি বলছিলেন, ‘আগোত কাজকাম করি চলছিনু। এলা ম্যালা বয়স হইছে। বেকার মানুষ। হাতোত টাকাপাইসা নাই। এ জারোত (শীতের সময়) তোমারগুলার নয়া কম্বল পায়া খুব ভালো হইলো। দিন–রাইতে গাত দিয়া থাকিম। জারত আরাম নাগবে।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের সহায়তায় আজ বুধবার সকালে লালমনিরহাটে খোকারামের মতো শীতার্ত ১০০ জনের মধ্যে বিনা মূল্যে নতুন কম্বল বিতরণ করা হয়। উপজেলার মহেন্দ্রনগরের নওদাবাস গ্রামে একটি বাড়ির উঠানে কম্বল বিতরণের কাজে সহায়তা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা লালমনিরহাটের সদস্যরা। খোকারাম লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগরের নওদাবাবাস গ্রামের হিন্দুটারী এলাকার বাসিন্দা।
একই ইউনিয়নের হরিঠাকুর গ্রামের সাহের বানু (৮৫) নতুন কম্বল পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘জারের দিনোত গরম কাপড় বিনে কী যে কষ্ট, তাক কয়া শ্যাষ হওয়ার নয়। এলা তোমরা মোক নয়া কম্বল দিলেন। মোর কষ্ট দূর হইলো। আল্লাহ পাক তোমারগুলার ভালো করবে।’
এর আগে এলাকাবাসীর সহায়তায় মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস গ্রামের পশ্চিমটারী ও দক্ষিণটারী এবং হিন্দুটারী ও একই ইউনিয়নের হরিঠাকুর গ্রামের ১০০ শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণের স্লিপ দেওয়া। সেই স্লিপ নিয়ে শীতার্তরা আজ সকাল থেকে নওদাবাস গ্রামে ওই বাড়ির উঠানে উপস্থিত হন।
কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা লালমনিরহাটের সভাপতি ফারাহ নাজ নাহার (ফিবা)। এর আগে বক্তব্য দেন লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগরের হরিঠাকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নায়েব আলী, লালমনিরহাট বন্ধুসভার প্রধান উপদেষ্টা ও প্রথম আলোর লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি আবদুর রব সুজন, লালমনিরহাট বন্ধুসভার উপদেষ্টা সাহেবর হোসেন প্রমুখ।
শিক্ষক নায়েব আলী বলেন, ‘ভালোর সঙ্গে আলোর পথে প্রথম আলো শুনেছিলাম। আজ শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত থেকে তার প্রমাণ পেলাম।’
কম্বল বিতরণের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নওদাবাস গ্রামের বাসিন্দা ও চরকুলাঘাট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনতাজ আলী, লালমনিরহাট প্রথম আলো বন্ধুসভার সহসভাপতি আবু সায়েদ বাঁধন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রনি কোরাইশি, অর্থ সম্পাদক আঁখি আক্তার, প্রচার সম্পাদক আওলাদ হোসেন, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক ববিতা সুলতানা, জেন্ডার সমতাবিষয়ক সম্পাদক সুমনা আক্তার ও কার্যনির্বাহী সদস্য-২ নাজমুল হুদা মিঠু প্রমুখ।
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে সহায়তার অর্থ পাঠাতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।
শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত ত্রাণ তহবিলে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫৯০ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে বিকাশের মাধ্যমে এসেছে ১ লাখ ১০ হাজার ২১০ টাকা। আর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এসেছে ২ লাখ ৮ হাজার ৩৮০ টাকা।