উপজেলা আ.লীগের নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ

টাঙ্গাইল জেলার মানচিত্র

টাঙ্গাইলের সখীপুরে সম্মেলনের ১৬ মাস ৭ দিন পর উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।

তবে সদ্য ঘোষিত কমিটিতে মাত্র তিনজন নারীর নাম স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া ভিন্নধর্মাবলম্বী একজনের নামও ওই কমিটিতে নেই। এতে উপজেলার নারী সমাজ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ওই কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

এর আগে প্রায় দেড় বছর ধরে শুধু সভাপতি ও সম্পাদক—এই দুইজনের ওপর ভর করেই চলছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। গত সোয়া এক বছরে কমিটি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটিয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ মাঠে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এতে সমঝোতার ভিত্তিতে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত শিকদারকে সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে শতকরা ৩০ ভাগ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম থাকলেও ওই কমিটিতে মাত্র ৪ ভাগ নারী স্থান পেয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।
মোসলিমা খাতুন , উপজেলা মহিলা আ.লীগের সভাপতি

সম্মেলনের পর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগ চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা প্রকাশ করে। কিন্তু এই তালিকা প্রকাশের পরপরই নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। মিছিল শেষে তাঁরা পৌর শহরের তালতলা চত্বরে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তাও অবরোধ করে। পরে আন্দোলনের মুখে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে ওই কমিটি স্থগিত করা হয়।

সদ্য ঘোষিত কমিটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহানের স্ত্রী তামান্না মহাসিনকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে বেবী বাদশা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের মেয়ে জাকিয়া ইসলামকে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলিমা খাতুন বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে শতকরা ৩০ ভাগ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম থাকলেও ওই কমিটিতে মাত্র ৪ ভাগ নারী স্থান পেয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।

কমিটিতে ভিন্নধর্মাবলম্বী কারও নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ দল। উপজেলায় ২৬ ভাগ লোক হিন্দুধর্মাবলম্বী। অথচ কমিটিতে একজন হিন্দুও স্থান পাননি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদার বলেন, ‘গত কমিটিতে মাত্র দুজন নারী ছিল। এবার একজন বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। কজন ভিন্নধর্মাবলম্বীর নাম আমাদের দেওয়া কমিটিতে ছিল। জেলা আওয়ামী লীগ ওই নামটি কেটে তাদের অনুসারী একজনের নাম দিয়েছে।’

কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে অনুপম শাহজাহান বলেন, দেরিতে হলেও দুই পক্ষের সমঝোতায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করায় সখীপুর আওয়ামী রাজনীতিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

কমিটি প্রসঙ্গে জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মিলেমিশেই কমিটি দিয়েছি।’