ফরিদপুরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় যুবকের সাড়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড
ফরিদপুরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মো. সালাউদ্দীন (৩০) নামে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সক্রিয় এক সদস্যকে সাড়ে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত এ রায় ঘোষণা করেন।
২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি ধারায় সাত বছর ও আরেকটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে চার মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নওয়াব আলী মৃধা রায়ের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
কারাদণ্ড পাওয়া সালাউদ্দীন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের শাকপালদিয়া গ্রামের আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নগরকান্দার শাকপালদিয়া গ্রামে আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার আশপাশে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, অস্থিরতা সৃষ্টি, অনলাইনে জঙ্গিবাদী প্রচারণা করছে এবং জননিরাপত্তা বিপন্ন করতে নিয়মিত বৈঠক করছে—এমন তথ্য পায় পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট বিকেলে নগরকান্দার লস্করদিয়া ইউনিয়নের মাঝিকান্দা গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। সালাউদ্দিনসহ এবিটির চারজন সেখানে সভা করতে একত্রিত হয়েছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্য পালাতে পারলেও সালাউদ্দীন গ্রেপ্তার হন। এ সময় তাঁর কাছ থেকে স্মার্টফোন ও কয়েকটি ‘ধর্মীয় ও উগ্রবাদী’ বই জব্দ করা হয়। দেশে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য সালাউদ্দিন ‘ক্ষণিকের মুসাফির’ নামে একটি ফেসবুক আইডিতে প্রচার করতেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ওই ঘটনার পরদিন সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৮,৯, ১০, ১১ ও ১৩ ধারায় মামলা করেন এটিইউর ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড প্রসিকিউশন উইংয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জিসান আহমেদ। দুই বছর পর ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এটিইউর ইনভেস্টিগেশন উইংয়ের পরিদর্শক মো. আজগর আলী ও পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ জুবায়ের মক্কী।
আদালত সূত্র জানায়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৯ ধারায় সালাউদ্দীনকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া ৮ ধারায় ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রমাণিত না হওয়ায় ১০,১১ ও ১৩ ধারার অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেন আদালত। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, দুই ধারায় দেওয়া সাজা একটির সাজা শেষ হলে অন্যটি কার্যকর হবে।
রায়ের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করে পিপি নওয়াব আলী মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের এই রায় দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে সহায়তা করবে। পাশাপাশি দেশের তরুণ সমাজের বিপথগামী হওয়ার প্রবণতা কমাবে।