‘ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের সবার ফাঁসি চাই’
‘ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন মাটি চাপা দিয়েছে খুনিরা। এখন সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের সবার ফাঁসি চাই।’ ময়মনসিংহে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী ওমর ফারুকের মা পারুল আক্তার আহাজারি করে এসব কথা বলছিলেন।
ওমর ফারুক ওরফে সৌরভের (২২) গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারাটি গ্রামে। তবে তাঁর পরিবার স্থায়ীভাবে ঢাকার মতিঝিলে বসবাস করে। তাঁর বাবার নাম ইউসুফ আলী। ওমর ফারুক গুলশানের বেসরকারি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গতকাল রোববার সকালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা এলাকায় সেতুর নিচে মাথা ও দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ওমর ফারুকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ইউসুফ আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গতকাল রাতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তারাটি গ্রামে নিহত ওমর ফারুকের বাড়িতে গিয়ে শোনা যায় স্বজনদের কান্নার রোল। বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড়। তাঁরা লাশ আসার অপেক্ষা করছেন। পারিবারিক গোরস্তানে কবর খোঁড়ার কাজ চলছে।
নিহত ওমর ফারুকের আত্মীয় বোরহান উদ্দিন বলেন, গত ১২ মে ওমর ফারুক তাঁর চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন। দুই পরিবারের অজ্ঞাতে ঢাকায় তাঁরা দুজন বিয়ে করেছিলেন। তাঁরা চাচা ইলিয়াস উদ্দিন এ বিয়ে মেনে নেননি। তিনি ওই বিয়ের জন্য বড় ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদের দোষারোপ করেছিলেন। বিয়ের পরদিন মেয়েকে কৌশলে ময়মনসিংহ নগরের বাসায় নিয়ে আসেন। পরে ১৬ মে মেয়েকে কানাডায় পাঠিয়ে দেন। ওমর ফারুককে হত্যার ঘটনায় তাঁর চাচা ইলিয়াছ উদ্দিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইউসুফ আলী ও ইলিয়াস আলীর বসতঘর দুটি পাশপাশি অবস্থিত। ইলিয়াস অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য। তিনি তারাটি গ্রামের একটি মাদ্রাাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি। ওমর ফারুকের পরিবার ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে। গত রোজার ঈদে ওমর ফারুক গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। পরে তিনি ঢাকায় ফিরে যান।
পারুল আক্তার জানান, কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ওমর ফারুক মতিঝিলের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বাসায় না ফেরায় ছেলের মুঠোফোনে খোঁজ নেন; তবে ফোন বন্ধ পান। বিষয়টি তাঁর মেয়েকে জানান। মেয়ে তাঁকে জানায় ওমর ফারুকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সে বাসায় ফিরবে বলে জানিয়েছে। এর পর থেকে ছেলের মুঠোফোন বন্ধ ছিল।
পারুল আক্তার বলেন, বিয়ের খবর জানার পর থেকে তাঁর দেবর ইলিয়াস প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁর স্বামীর মুঠোফোনে ফোন করে ওমর ফারুককে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। সেই হুমকির রেকর্ডও তাঁদের কাছে রয়েছে। ওই বিষয়ে ওমর ফারুক রাজধানীর মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার পুলিশ ঈশ্বরগঞ্জ থানায় গিয়ে জিডি করতে বলেছিল।