কটাক্ষ করার জেরে ঢাল-সড়কি নিয়ে জামাতা-শ্বশুরপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় শ্বশুরকে কটাক্ষ ও পূর্ববিরোধের জেরে ঢাল, সড়কিসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে জামাতা ও শ্বশুরপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আজ বুধবার সকালে উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত দুজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একজন ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও মুনসুরাবাদ গ্রামের ইলিয়াস মাতুব্বরের মেয়ে অন্তরা আক্তার (১৮) গ্রামের একটি কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। ওই মাদ্রাসার পরিচালক জাহিদ মোল্লার (৩৮) সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর দেড়েক আগে জাহিদ অন্তরাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু জাহিদের আগে আরও দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান আছে। ওই বিয়ে মেনে নেননি অন্তরার বাবা ইলিয়াস মাতুব্বর। অন্যদিকে জাহিদের বড় ভাই আলমগীর মোল্লা ওই ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর জেরে দুই পক্ষের মধ্যে আগেও কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে।
সূত্র জানায়, সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ইলিয়াস মাতুব্বরকে একা পেয়ে জাহিদ মোল্লার চাচাতো ভাই রাসেল মোল্লা কটাক্ষ করে কথা বলেন। বিষয়টি তিনি তাঁর লোকজনকে জানান। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর গতকাল বিকেলে মুনসুরাবাদ বাজারে ইলিয়াস মাতুব্বরকে মারধর করেন জাহিদ মোল্লার লোকজন। আজ সকালে জামাতা ও শ্বশুরপক্ষের লোকজন ঢাল, সড়কিসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে গুরুতর আহত ইলিয়াসের ভাই রিয়াজ মাতুব্বর (৪৩) ও চাচাতো ভাই কামরুল মাতুব্বরের স্ত্রী চম্পা বেগমকে (৩২) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন ইলিয়াসের আরেক ভাই ইকলাস মাতুব্বর (৩৫)।
ইকলাস মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহিদ মোল্লা মাদ্রাসার শিক্ষক হয়েও তাঁর মাদ্রাসার ছাত্রী আমার ভাতিজিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। এটা জাহিদের তৃতীয় বিয়ে। আমরা এই বিয়ে মেনে নিইনি। এ কারণে জাহিদের ভাইয়েরা আমাদের কটাক্ষ করে সব সময়। সর্বশেষ গতকাল আমার বড় ভাইকে কটাক্ষ করে। প্রতিবাদ করায় মারধর করে। আজ আমাদের ওপর জাহিদ ও তাঁর বড় ভাই আলমগীর মোল্লার নেতৃত্বে হামলা ও মারধর করে। কুপিয়ে জখম করে।’
এ বিষয়ে জাহিদের বড় ভাই ইউপি সদস্য আলমগীর মোল্লা বলেন, ইলিয়াস মাতুব্বরের মেয়ে স্বেচ্ছায় তাঁর ভাইকে বিয়ে করেছেন। তাঁরা সুখে আছেন। কিন্তু ইলিয়াস মাতুব্বর বিয়ে মেনে না নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বিরোধ চালিয়ে আসছে।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বেলা দুইটা পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।