মেঘ কেটে গিয়ে সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার ছিল। সকাল আটটা বাজতেই গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্মৃতি মিলনায়তনে কৃতী শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে আসতে থাকে। অনেকের সঙ্গে তাদের মা-বাবা ও স্বজনেরা আসেন। এখানেই আজ শনিবার আয়োজন করা হয়েছিল শিখো-প্রথম আলো কৃতী সংবর্ধনা। শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুহূর্তে অনুষ্ঠানস্থলে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
শিখো ও প্রথম আলোর আয়োজনে গোপালগঞ্জ শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে অংশ নিতে জেলার চার শতাধিক শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে।
গোপালগঞ্জের পাচুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান এসেছিলেন তাঁর মেয়ে তাসনিম মিজানকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো সারা বাংলাদেশে এ ধরনের অনুষ্ঠান করে আসছে, এটা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। আজ মেয়ের সঙ্গে এখানে এসে এই সুন্দর আয়োজন উপভোগ করছি।’
অনুষ্ঠান শুরুর আগে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরা প্রথম আলোর বুথ থেকে স্ন্যাকস ও ক্রেস্ট সংগ্রহ করে। এরপর দল বেঁধে ছবি তোলে। কেউ কেউ তোলে সেলফি। সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠে কৃতী শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টার সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মিলনায়তনে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সেখ বেনজীর আহমেদ, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা আহমেদুল কবির, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক প্রবীর কান্তি বালা, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি নুতন শেখ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গোপালগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইংরেজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক সাবিয়া আফরোজ ও বন্ধুসভার সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবির হোসেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন গোপালগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যক্ষ সেখ বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমার দেখেছি লেখাপড়া শিখে অনেকে তাদের মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখে। তাই ভালো মানুষ সব সময় দেশের সম্পদ। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম আলো ভালো পথে যাওয়া অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।’ অধ্যক্ষ বেনজীর আরও বলেন, ‘তোমাদের শুধু জিপিএ-৫ পেলেই হবে না, তোমাদের অবশ্যই মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে। তোমাদের মধ্যে কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমার একটাই অনুরোধ, যারা ডাক্তার হবে, বিনা প্রয়োজনে কাউকেই অপারেশনের টেবিলে নিয়ো না। শারীরিক পরীক্ষার বোঝা রোগীদের মাথায় চাপিয়ে দিয়ো না। যারা ইঞ্জিনিয়ার হবে, তাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের যেন শুনতে না হয় অমুক জায়গা রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়েছে। এসবের জন্যই মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে।’
চিকিৎসক আহমেদুল কবির বলেন, ‘আগে ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো ফলাফলের পাশাপাশি ভালো মানুষ হলে তবেই তুমি সফলতার শীর্ষে যেতে পারবে।’
কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেয় গোপালগঞ্জের বীণাপাণি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লুবাইনা রুবাব সাফা। সে বলে, ‘আমার এখন পর্যন্ত জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্মাননা এটা। শিখো-প্রথম আলো আজ আমাকে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞ।’
অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের মাদকের বিরুদ্ধে শপথ পড়ান প্রবীর কান্তি বালা। জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পী মো. সম্রাট হাজরার নেতৃত্বে তাঁর দল চারটি গানে নৃত্য পরিবেশন করে। এ ছাড়া জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নাইম খান, সকাল ভট্টাচার্য একক আবৃত্তি করে।
সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
দিনব্যাপী সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, সনদ, প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস বক্স।