২৪ ঘণ্টায়ও চালু হয়নি বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন, সব ইউনিট বন্ধ
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনব্যবস্থা এখনো সচল হয়নি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পুরোপুরিভাবে বন্ধ আছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিটের উৎপাদন। গতকাল সোমবার সকাল নয়টার দিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তৃতীয় ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে থেকেই অন্য দুই ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটটি ফের বন্ধ হয়ে যায়। এর মাত্র চার দিন আগে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয়েছিল। এ ইউনিট চালু রাখতে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৩০০ টন কয়লা প্রয়োজন হয়। ইউনিটটি দীর্ঘ ৩৬ দিন পর ৬ সেপ্টেম্বর যান্ত্রিক সমস্যা সমাধান করে উৎপাদন শুরু হয়েছিল।
সেই সঙ্গে ওই দিন রাত পৌনে নয়টায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিট সংস্কারকাজের জন্য এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১ নম্বর ইউনিট ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার হলেও উৎপাদিত হতো মাত্র ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর ২ নম্বর ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার হলেও ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো।
তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট উৎপাদনের জন্য দৈনিক প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে প্রায় ২ লাখ টন কয়লা মজুত আছে। তিনটি ইউনিট একসঙ্গে কখনই চালানো হয়নি। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সরবরাহ করা কয়লার ওপর নির্ভর করে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এই প্রথম বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট বন্ধ হয়েছে। ফলে পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলা ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে।
গতকাল সকালে রিজার্ভে থাকা অপর অয়েল পাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তৃতীয় ইউনিটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিক চিঠি চালাচালি করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। চীন থেকে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) এলেই ইউনিটি চালু করা সম্ভব হবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ২০২২ সালের অক্টোবরে ৩ নম্বর ইউনিটের অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) নষ্ট হয়ে যায়। গতকাল সকালে রিজার্ভে থাকা অপর অয়েল পাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তৃতীয় ইউনিটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিক চিঠি চালাচালি করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। চীন থেকে অয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) এলেই ইউনিটি চালু করা সম্ভব হবে।
১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালে চীনা কারিগরি সহায়তায় দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির পাশে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। প্রত্যাশা ছিল এর মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মিটবে। সেই সঙ্গে শিল্পকলকারখানা ও কৃষি খাতে বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে উন্নীত হবে।