ক্রেতা সেজে চা-বাগান থেকে ধনেশ পাখির ছানা উদ্ধার
ধনেশ পাখির একটি ছানা চা-বাগানের এক ব্যক্তির কাছে আছে, খবরটি জানার পরই বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফের (সিউ) সদস্যরা মাঠে নামেন। ক্রেতা সেজে নানা সূত্র ধরে শুরু হয় তালাশ। শেষমেশ ছানাটির ঠিকানা মেলে।
এরপরই বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও সিউয়ের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা-বাগানের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ধনেশ পাখির ছানাটি উদ্ধার করা হয়েছে। বন বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিউয়ের তত্ত্বাবধান ও পরিচর্যায় আছে ছানাটি।
সিউ, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাতে সিউয়ের সদস্যদের কাছে খবর আসে কমলগঞ্জের পাত্রখোলা চা-বাগানে এক ব্যক্তির কাছে একটি ধনেশ পাখির ছানা আছে। এরপরই সিউয়ের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে যাঁর কাছে ছানাটি আছে, ওই ব্যক্তির খোঁজ মেলে। তাঁর নাম রিপন।
রিপন নামের ওই ব্যক্তি পাখির ছানাটির দাম চান পাঁচ হাজার টাকা। তিনি টাকা বিকাশে পাঠানোর কথা বলেন। তখন সরাসরি পাখি দেখে দাম নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। ঠিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর আজ সকাল আটটার দিকে উদ্ধারকারী চারজনের একটি দল শ্রীমঙ্গল থেকে পাত্রখোলার দিকে রওনা দেয়। এই দলে ছিলেন সিউয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বন্য প্রাণী উদ্ধারকারী সোহেল শ্যাম ও সদস্য পাপ্পু ধর, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট তাজুল ইসলাম ও সুব্রত সরকার।
সোহেল শ্যাম বলেন, ‘আমি অন্যদের কিছুটা দূরে রেখে গিয়েছিলাম। রিপনের কাছ থেকে ছানাটি নিয়ে হাঁটা শুরু করি। তখন সঙ্গের এরাও আমার কাছে চলে আসেন। এ সময় চা-বাগানের লোকজন ভিড় করতে শুরু করেন। রিপনও পাখি উদ্ধার অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে সটকে পড়েন। আমরা দ্রুত ছানাটি নিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে আসি।’
রিপন তাঁদের জানিয়েছেন, ঝড়ে একটি গাছ ভেঙে পড়েছিল। সেই গাছের নিচে তিনি ছানাটি পেয়েছেন। কবে পেয়েছেন বলেননি। ধনেশ মূলত গভীর জঙ্গলের পাখি। প্রকৃতই চা-বাগানে ঝড়ে পড়েছে কি না, বলা মুশকিল। আশপাশের লোকজন বলেছেন, আরও একটা ধনেশ পাখি ছিল। ওটা রিপন কী করেছেন, জানা যায়নি। ছানাটির বয়স ১৫ থেকে ২০ দিন হতে পারে।
সোহেল শ্যাম আরও বলেন, বন বিভাগ আপাতত তাঁকে পাখিটি দেখভাল করার জন্য বলেছে। এটি বড় হতে মাসখানেক লাগবে। ছানাটি আম, কলা, জাম প্রভৃতি ফল খাচ্ছে।
বন্য প্রাণী–গবেষক সীমান্ত দীপু জানান, পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিকার হয় ধনেশ। কুসংস্কার আছে এই পাখি কবিরাজি ওষুধে কাজে লাগে। ধনেশ পাখি পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। রাজধনেশ ও উদয়ী ধনেশ একসময় অনেক বেশি ছিল। এখন বিলুপ্তির পথে। রাজধনেশ বাংলাদেশে মহাবিপন্ন পাখি। উদয়ী ধনেশ এখন পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চল ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে কিছু দেখা যায়, তা–ও আগের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। সচেতনতা বাড়ানো গেলে পাখিটি টিকে থাকবে।