গাইবান্ধায় মজলিশের খাবার খেয়ে দুই শতাধিক মানুষ অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি ১৪৪ জন
গাইবান্ধায় মজলিশের খাবার খেয়ে বিভিন্ন পেশার দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪৪ জন দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭১ জন এবং গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ৭৩ জন ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ভর্তি হওয়া রোগীরা আশঙ্কামুক্ত।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, গত রোববার সকালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের ফুলবাড়ি রিফাইতপুর গ্রামের ইজিবাইকচালক বেলাল হোসেনের মায়ের মজলিশ (চেহলাম) অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে তাঁর স্বজন ও এলাকাবাসীসহ প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেন। মজলিশে চালের আটার ডাল দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়। খাবার খাওয়ার পর ওই দিন মধ্যরাত থেকে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা ও বমিভাব দেখা দেয়। অনেকে প্রাথমিকভাবে বাড়িতে চিকিৎসা নেন। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিন গতকাল সোমবার সকাল থেকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকেন। অসুস্থ হওয়া রোগীরা গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল এবং পার্শ্ববর্তী ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং অনেকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসাধীন ফুলবাড়ি রিফাইতপুর গ্রামের আবদুল হাই (৫৫) বলেন, ‘ওই মজলিশে দাওয়াত খাওয়ার পর মাঝরাত থেকে আমি ও আমার স্ত্রীর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই। আমাদের আরও অনেক আত্মীয়স্বজন এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন আমরা ভালো আছি।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একই গ্রামের সাদা মিয়া ও সাইফুল ইসলাম বলেন, কারও রোববার মধ্যরাত থেকে আবার কারও সোমবার সকাল–দুপুর থেকে ডায়রিয়া, বমি শুরু হয়। অনেক শিশুও খুব অসুস্থ। চিকিৎসা নেওয়ার পর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
গাইবান্ধা হাসপাতাল ও ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত এই দুই হাসপাতালে দুই শতাধিক বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা নেন এবং ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ১২৪ জন চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ৫১ জন রোগীকে আজ দুপুরে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাকি ৭৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অন্যদিকে ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত ৭১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘খাবারে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হওয়ার কারণে তাঁরা অসুস্থ হয়ে থাকতে পারেন। ফলে তাঁদের মধ্যে পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা ও বমি হয়েছে। আমরা তাঁদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসাধীনরা আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন। রোগী বেশির কারণে স্যালাইন–সংকট দেখা দিয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় দুজনকে রংপুরে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি আইডিসিআর এবং সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে।’