বাবা নেই, তাই ঈদও নেই সাংবাদিক গোলাম রব্বানির সন্তানদের
ঈদের দিন আট বছর বয়সী রিসাদের ঘরে-বাইরে ছুটে বেড়ানোর কথা। দুই সপ্তাহ আগেও তার দুষ্টুমিতে অতিষ্ঠ থাকত পুরো পরিবার। সেই ছেলের মুখে ঈদের দিনেও হাসি নেই। ঈদের নতুন জামা কেনা হয়নি বলে মনে খেদ নেই তার। সে শুধু একটিবার বাবাকে দেখতে চায়। মোবাইলে ও বাঁধাই করা ছবি দেখিয়ে ছোট্ট রিসাদের প্রশ্ন, ‘বাবা আর কি আসবে না?’
এমনই শোকের আবহ নিয়ে এবার ঈদ করছে জামালপুরের বকশীগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানির পরিবার। বাড়িতে উৎসবের আমেজ নেই। পুরো বাড়ি সুনসান। কিছুক্ষণ পরপর স্বজনদের কেউ কেউ কান্নাকাটি করছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বকশীগঞ্জের গোমেরচর গ্রামে সাংবাদিক গোলাম রব্বানির বাড়িতে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে।
১৪ জুন রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়িতে ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি। পরের দিন দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি অনলাইন পোর্টাল বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।
স্বামীর মৃত্যুর পর দুই ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন (১৯), রিসাদ আবদুল্লাহ (৮) ও মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাতকে (১৮) নিয়ে ভেঙে পড়েছেন গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম। বিয়ের পর এবারই স্বামীকে ছাড়া প্রথম ঈদ করছেন মনিরা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার বিবাহিত জীবনে স্বামীকে ছাড়া ঈদ যাচ্ছে এই প্রথম। একই রকম সন্তানদের কাছেও বাবাকে ছাড়া ঈদ। ছোট ছেলেটি অন্য রকম হয়ে গেছে। শুধু বাবার ছবি নিয়ে চুপচাপ থাকে। মাঝেমধ্যে প্রশ্ন করে, বাবা আর আসবে না? আর সহ্য করতে পারছি না।’ একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
গোলাম রব্বানির মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, ‘বাবা ঢাকায় নিয়ে ঈদের শপিং করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা তো এখন আর নেই। তাই আমাদের আবার কিসের ঈদ? আমাদের তিন ভাইবোনের মধ্যে বাবা আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করতেন। আমি যখন যা চেয়েছি, বাবা দিয়েছেন। আমার ইচ্ছাপূরণের আর কেউ রইল না। বাবাই ছিল আমার জীবনের সবকিছু। আর সেই বাবাকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করল।’
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি গত কোরবানির ঈদে নিজে গরু কিনেছিলেন। তিনি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতেন। রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম কল্পনাও করেননি, সন্ত্রাসীদের হাতে তাঁর স্বামীর প্রাণ যাবে। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগেও রব্বানি স্ত্রী-সন্তানকে ঢাকায় নিয়ে ঈদের বাজার করার কথা বলেছিলেন। মনিরা বেগম বলেন, ‘মৃত্যুর কয়েক দিন আগেও বলেছিল, এবার ঈদে সবাইকে নিয়ে ঢাকায় যাবেন। ঈদের মার্কেট করবেন। কিন্তু কে জানত, তাঁর এভাবে মরতে হবে। যাঁরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, এখন শুধু তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেখতে চাই। হত্যাকারীদের শাস্তি হলে আমার স্বামীর আত্মা শান্তি পাবে। আর কিছু চাওয়ার নেই।’
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাধুরপাড়া ইউপির বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম, তাঁর ছেলেসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে। এ ঘটনায় প্রধান আসামি মাহমুদুলসহ ১৩ জন কারাগারে। ১৩ জনের মধ্যে মাহমুদুলসহ তিনজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মাহমুদুল সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।