চৌদ্দগ্রামে একুশের রাতে শহীদ মিনার ভাঙল দুর্বৃত্তরা
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ডিগ্রি কলেজের মাঠে থাকা শহীদ মিনারটিতে মহান একুশের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা জানান কলেজ কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় লোকজন। এরপরই রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলেছে। আজ শুক্রবার সকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের লোকজন ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসে দেখেন শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দুটি ভাঙা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্তের দাবি জানিয়েছে তাঁরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতের কোনো এক সময়ে শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন।
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গুণবতী ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত শহীদ মিনারটি গুণবতী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে পরিচিত। কলেজের পাশেই অবস্থিত গুণবতী বালক ও বালিকা বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিবছরের মতো এ বছরও শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার গুণবতী কলেজের শহীদ মিনারটি সাজানো হয়। রাত ১২টা ১ মিনিটে কলেজ কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় বিএনপিসহ কয়েকটি সংগঠন ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। আজ সকালে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের লোকজন এসে দেখেন শহীদ মিনারের দুটি স্তম্ভ ভাঙা।
খবর পেয়ে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামাল হোসেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মীর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাহফুজুর রহমান, গুণবতী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম চৌধুরীসহ রাজনৈতিক দলের লোকজনও গুণবতী ডিগ্রি কলেজের মাঠে আসেন।
দুপুরে গুণবতী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একুশের প্রথম প্রহরে আমরাসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। কিন্তু ভোরেই খবর পাই শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। গভীর রাতে কে বা কারা শহীদ মিনারের দুটি স্তম্ভ ভাঙচুর করেছে আমরা বলতে পারব না। রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে গুণবতী বিগত সময়ে অশান্ত ছিল। বর্তমানে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। আমার মনে হয় যারা এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তারাই এ ঘটনা করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।’
কলেজের নৈশপ্রহরী সামছুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুটার পর শহীদ মিনারের স্তম্ভ ভাঙার শব্দ শুনতে পান। তবে পরে সেখানে গিয়ে কাউকে দেখেননি তিনি। এ ছাড়া আশপাশে খুঁজেও কাউকে দেখতে পাননি। চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে মাঠের যেই স্থানে শহীদ মিনারটি, সেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’
চৌদ্দগ্রামের ইউএনও মো. জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে পৃথক আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে জেনেছি, ওই শহীদ মিনারের একটি স্তম্ভ এর আগেও দুবার ভেঙে পড়েছিল। পরে সেটি মেরামত করা হয়েছে। কারণ, অনেক আগে নির্মিত হওয়ায় শহীদ মিনারটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমরা তদন্ত শেষ হলেই এ নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারব। যদি কেউ শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’
স্থানীয় গুণবতী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর দাবি, এলাকায় রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য একটি পক্ষ শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলতে পারে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফ জিয়া বলেন, ‘একুশের প্রথম প্রহরে কলেজ কর্তৃপক্ষের পরে আমরা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। আজ সকালে খবর পাই রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা শহীদ মিনারটি ভেঙে দিয়েছে। এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি।’
রাতের আঁধারে শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমান। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন তিনি।