আন্দোলনের মুখে বন্ধ হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রপাড়ে গণশৌচাগার ও ট্রান্সফার স্টেশনের নির্মাণকাজ
ময়মনসিংহ নগরে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গণশৌচাগার ও ময়লা ফেলার ট্রান্সফার স্টেশনটি আন্দোলনের মুখে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আজ বুধবার সকালে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজহারুল হক এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পরিবেশবান্ধব করেই গণশৌচাগার ও ট্রান্সফার স্টেশনটি করা হচ্ছিল। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী পৌর বাজারসংলগ্ন স্থানে করার কথা থাকলেও জায়গা না থাকায় বেড়িবাঁধ ঘেঁষে করা হচ্ছিল। স্থানটি থেকে নদীর দূরত্ব প্রায় ৫০০ মিটার। যেহেতু এটি নিয়ে আপত্তি উঠেছে, সে কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে, মালামালও সরিয়ে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ট্রান্সফার স্টেশনটি হলে তিনটি ওয়ার্ডের আবর্জনা দিনের বেলায় এখানে জমা করে রাতে ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হতো।
আজ বেলা ১১টার দিকে ওই এলাকায় যান ‘ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের’ কর্মীরা। সংগঠনটির সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, ‘কয়েকটি পিলার সরানো হলেও মূল অবকাঠামো এখনো রয়ে গেছে। আজকের মধ্যে তা না সরালে আমরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচির দিকে যাব।’
আবুল কালাম বলেন, ‘প্রথমে শুনেছিলাম ব্রহ্মপুত্রের বুকে একটি পাবলিক টয়লেট হচ্ছে। পরে শুনলাম দুইটা। আমরা প্রতিবাদ করতে নেমে যা জানলাম, তাতে বাক্রুদ্ধ। আগেও নদীর বুকে রাস্তা ও পাকা ঘাট তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল। নদী হত্যার এমন প্রকাশ্য আয়োজন চলছে জনগণের ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে! আইনকানুন কোথায়? আমরা এর অবসান চাই।’
এর আগে গত শনিবার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গণশৌচাগার তৈরির পরিকল্পনাকারীদের
বিচার এবং স্থাপনাটি অপসারণের দাবিতে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নাগরিকেরা। ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা দাবি না মানলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশন ঘেরাও করার হুঁশিয়ারিও দেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. তানিম হোসেন বলেন, একটি গণশৌচাগারের কাজ শুরু হয়েছিল। পাশেই আবর্জনা ট্রান্সফার স্টেশন করার জন্য পাইলিং করা হয়েছিল। সিটি করপোরেশনের নির্দেশে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে পিলার ভেঙে ফেলেছে একদল সন্ত্রাসী।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ প্রকল্পটি ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন দেওয়া হয়। ১২২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে ৩৫টি গণশৌচাগার নির্মাণ করার কথা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির সময় তৎকালীন কাউন্সিলররা জায়গা নির্ধারণ করলেও সেখানে কাজ করতে গিয়ে নগরবাসীর বাধার মুখে পড়ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে যেনতেন কাজ করে সিটি করপোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।