পাবনায় স্বামীকে জিম্মি করে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, চার দিনেও কোনো গ্রেপ্তার নেই
পাবনার সুজানগর উপজেলায় অস্ত্রের মুখে স্বামীকে জিম্মি করে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ওই দম্পতি একটি ইসলামি জলসা থেকে তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ফিরছিলেন। গত শুক্রবার রাতে সুজানগর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরদিন গত শনিবার ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে আমিনপুর থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। তবে পুলিশ চার দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মামলার আসামিরা হলেন সুজানগর উপজেলার সেলিম প্রামাণিক (২৩), মো. শরীফ (২৪), রাজীব সরদার (২১), রুহুল মণ্ডল (২৬), লালন সরদার (২০) ও সিরাজুল ইসলাম (২৩)।
ভুক্তভোগী দম্পতি ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলায়। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি পাশের সুজানগর উপজেলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার রাতে সেখান থেকে একটি ইসলামি জলসায় যান। জলসা শুনে রিকশায় আত্মীয়ের বাড়িতে ফেরার পথে অভিযুক্ত তরুণেরা তাঁদের পথরোধ করেন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী কি না, জানতে চান। এরপর বিভিন্ন প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে স্বামীকে জিম্মি করে ওই নারীকে পাশের একটি ভুট্টাখেতে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। ওই নারীর স্বামী জিম্মিদশা থেকে ছুটে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিষয়টি জানান। পরে এলাকাবাসী এসে ধাওয়া দিয়ে তরুণদের একজনকে আটক করেন। অন্যরা পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে পাবনার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাঁকে বাড়িতে নেওয়া হয়। আটক তরুণকেও পিটুনি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই গ্রামের দুজন বাসিন্দা বলেন, শুক্রবার রাতে তাঁদের গ্রামে ওয়াজ মাহফিল চলছিল। রাত একটার দিকে ছেলেটি (স্বামী) ছুটে এসে জানান, তাঁর স্ত্রীকে কয়েকজন লোক ধরে নিয়ে গেছে। পরে গ্রামের লোকজন জলসা থেকে গিয়ে হাতেনাতে একজনকে আটক করে পিটুনি দেন। একই সঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রী বেশ অসুস্থ। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় আছেন। মামলা তুলে নিতে হুমকি পাচ্ছেন। নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। তাঁর স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলেও দাবি করেন।
পাবনা শহরের ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, ভর্তির সময় ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন হাসপাতালে এমন কোনো কিছু জানানো হয়নি। ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ভুক্তভোগী নারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা পিশাচের মতো আচরণ করছে। আমার সাথে অত্যাচার করছে। অস্ত্র দেখায়া আমার স্বামীকে মারপিট করছে। আমি এর বিচার চাই।’
ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধারের পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেন একজন পল্লিচিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘উদ্ধারের পর তিনি (নারী) রক্তাক্ত ছিলেন। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম।’
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশাসনের তেমন তোড়জোড় আছে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা এ রকম একটা ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি করি।’
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। তাঁরা সব গা ঢাকা দিয়েছেন। ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।