খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় দক্ষিণ কবিরপুর উদয়ন সংঘের খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের কবিরপুর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
কবিরপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে কবিরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হন। এ সময় তাঁরা ‘আমাদের মাঠ ফিরিয়ে দাও’, ‘রক্ত দেব মাঠ দেব না’, ‘মাদকমুক্ত সমাজ চাই, সে জন্য মাঠ চাই’, ‘এই মাঠ ছাড়ব না, প্রতিভা বিকাশে মাঠ চাই’ লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেন। পরে তাঁরা ‘প্রজন্মের অধিকার ৬৩ বছরের এই খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন’ লেখাসংবলিত ব্যানার নিয়ে মহাসড়কের চন্দ্রাগামী লেনের একপাশে মানববন্ধন করেন।
মাঠটির ইতিহাস তুলে ধরে দক্ষিণ কবিরপুর উদয়ন সংঘের উপদেষ্টা ফরিদ হোসেন জানান, ১৯৬০ সালে কবিরপুর গ্রামে অসমতল সরকারি খাসজমিকে খেলার উপযোগী মাঠ হিসেবে তৈরি করেন স্থানীয় লোকজন। মাঠটি আরএস ভূমি জরিপ ম্যাপে চতুর্ভুজাকৃতির মাঠ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। ১৯৮৭ সালে দক্ষিণ কবিরপুর উদয়ন সংঘ নামে একটি ক্লাব এই মাঠের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৮ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়।
সংঘের ওই উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খেলার এই মাঠের বন্দোবস্ত গ্রহণের জন্য দক্ষিণ কবিরপুর উদয়ন সংঘের পক্ষ থেকে ২০০৪, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হলেও কোনো ফল মেলেনি। ২০১২ সালের নভেম্বরে মাঠসহ পাশের ৮ একর জমি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে ১৯৯১/১২ নং দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দলিল মোতাবেক বন্দোবস্ত গ্রহণ করে।
ফরিদ হোসেন বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা আছে, খাস খতিয়ান রেকর্ডভুক্ত জনগণের ব্যবহার্য রাস্তাঘাট, নদী, খাল, নালা, পয়োপ্রণালি, পুকুর, বাঁধ, কবরস্থান, শ্মশান, পার্ক, খেলার মাঠ বন্দোবস্তের আওতায় আসবে না। এরপরও মাঠটি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা মাঠে উপস্থিত হয়ে ক্লাবের সদস্য ও এলাকাবাসীকে জানিয়েছেন মাঠের জায়গায় তাঁদের স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এমন অবস্থায় মাঠটি এলাকার অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়ার অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মীম আক্তার বলে, ‘আমাদের স্কুলে কোনো খেলার মাঠ না থাকায় স্কুলের ফাঁকে আমরা এই মাঠে এসে খেলাধুলা করি। এই মাঠেই আমাদের স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মাঠ না থাকলে আমাদের খেলাধুলার জায়গা থাকবে না। সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমাদের এই মাঠটি যেন তারা কেড়ে না নেয়।’
দক্ষিণ কবিরপুর উদয়ন সংঘের সভাপতি জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের কবিরপুরের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা এই মাঠ খেলাধুলা, জানাজা, ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করেন। তাই মাঠটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বিষয়টি নজরে আনা হলে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তর বা ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে তাঁরা আবেদনটি জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করবেন। এ ছাড়া এলাকাবাসী যদি স্মারকলিপি বা আবেদন সংশ্লিষ্টদের দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার সহযোগিতা প্রয়োজন মনে করেন তবে আমি তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’