‘আমার ছেলের তো কোনো অপরাধ ছিল না, তাকে কেন হত্যা করা হলো’
‘আমার ছেলের তো কোনো অপরাধ ছিল না। সে তো মসজিদে তারাবিহর নামাজ পড়তে ঘর থেকে বের হয়েছিল। তাকে কেন হত্যা করা হলো? আমি কার কাছে এর বিচার চাইব?’
ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইতেই এভাবে বিলাপ করছিলেন নিহত স্কুলছাত্র মো. রায়হানের মা নুর নাহার বেগম (৪০)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে নোয়াখালী সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ হুগলি গ্রামের একটি বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নুর নাহার বেগম ও মো. আলমগীরের ছেলে রায়হান চার ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়। স্থানীয় খলিপারহাট উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত সে।
পরিবার জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারাবিহর নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে মসজিদের উদ্দেশে রওনা দেয় রায়হান। তার বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হলে আশপাশের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নেন নুরুন নাহার। পরদিন বুধবার সকালে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে তাঁর মেজ ছেলের ফোনে একটি ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে তাঁর ছেলেকে বলা হয়, ‘তোমার ভাইকে ফেরত পেতে চাইলে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে।’ ফোনে একটি জায়গার নামও বলা হয়, টাকা নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য। একই দিন বিকেল চারটার দিকে আবারও ওই নম্বর থেকে ফোন আসে। তখন তাঁরা বিষয়টি থানায় জানিয়ে রাখেন। এরপর পুলিশ ফোন নম্বরের সূত্র ধরে মারুফ নামের এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে। পরে মারুফের দেখানো স্থান থেকে রায়হানের লাশ উদ্ধার করা হয়। মারুফ তাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয়।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার মারুফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই গ্রামের আরেকটি বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে রায়হানের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ জানান, ঘটনার রাতে তিনি রায়হানকে নিয়ে প্রতিবেশী একটি বাড়ির বাগান থেকে ডাব পেড়ে খেতে গিয়েছিলেন। সেখানে হাসি-ঠাট্টার একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে রায়হানের মাথায় একটি আঘাত করেন। তখন রায়হান অচেতন হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু ঘটে। পরে কাছাকাছি একটি বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করে রাখেন তিনি। আজ শুক্রবার মারুফকে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।