তিন প্রজন্মের অভিজ্ঞতায় তৈরি দইয়ের সুনাম ছড়াচ্ছে চারদিকে

নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় আশীর্বাদ মিষ্টান্ন ভান্ডার
ছবি: প্রথম আলো

৩৫ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় ‘আশীর্বাদ মিষ্টান্ন ভান্ডার’ যাত্রা শুরু করে। সেই থেকে অদ্যাবধি মিষ্টি, দই, পরোটা-ভাজি বিক্রি হয়ে আসছে। স্বাদে ভিন্নতার জন্য আশীর্বাদ মিষ্টান্ন ভান্ডারের দইয়ের সুনাম ও চাহিদা বেশি। এই দোকান নারায়ণগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এখানকার দই খেতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন।

শহরের গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা কানাই লাল মোদক এই মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শুরুতে পরোটা-ভাজি, মিষ্টি, দই, রসমালাই ও ঘি—এসব পদ নিয়ে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন। পরে ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিসর বাড়তে থাকে। ২০০২ সালে কানাই লাল মোদক মারা গেলে ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর তিন ছেলে সীতা রাম মোদক, বলরাম মোদক ও হরে রাম মোদক। তাঁরা দোকানে মিষ্টির পদের সংখ্যা বাড়ান। এর মধ্যে সীতারাম মোদক ও বলরাম মোদক মারা যান। এখন কানাই লাল মোদকের ছোট ছেলে হরে রাম মোদক ও তাঁর প্রয়াত দুই ভাইয়ের ছেলেরা ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

দোকান কর্মচারী জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাদের জন্য এই দোকানের দইয়ের চাহিদা বেশি। দোকানের কর্মচারী আমরা যারা আছি, সবাইকে সারা দিন দই বিক্রিতে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়।’

নারায়ণগঞ্জের আশীর্বাদ মিষ্টান্ন ভান্ডারের দইয়ের খ্যাতি এখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে
ছবি: প্রথম আলো

কানাই লাল মোদকের ছেলে হরে রাম মোদক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দোকানের দই প্রসিদ্ধ। আগে বাবা-দাদারা নিজে হাতে মিষ্টি ও দই তৈরি করতেন। এখন দই ও মিষ্টি তৈরিতে কারিগর লাগে।’ হরে রাম মোদক বলেন, তাঁদের দোকানের দইয়ের বিশেষত্ব হচ্ছে, আড়াই কেজি দুধ জাল দিয়ে এক কেজি দই তৈরি হয়। দুধ ঘন করে জ্বাল দেওয়ার পর ছয় ঘণ্টা দই জাগ দেওয়া হয়। এ সময় জাগ দেওয়া দইয়ের ওপরে দুধের মালাই দেওয়া হয়। এ কারণে তাঁদের দই খেতে সুস্বাদু ও ঘনত্ব বেশি। তাঁরা সব সময় একই প্রক্রিয়ায় দই তৈরি করে আসছেন। তাঁদের দোকানের দই খেতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও দেশের বাইরে থেকে লোকজন আসেন।

নারায়ণগঞ্জের আশীর্বাদ মিষ্টান্ন ভান্ডারের সন্দেশ
ছবি: প্রথম আলো

সীতারাম মোদকের ছেলে সুব্রত মোদক বলেন, প্রতিদিন তাঁদের দোকানে মিষ্টি ও দই তৈরিতে ১১ মণ দুধ লাগে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর থেকে এই দুধ সংগ্রহ করা হয়। দই ও মিষ্টি খেতে দোকানে ভিড় করেন নারী-পুরুষ, শিশুসহ দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজন। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকানে বেচাকেনা হয়। প্রতি কেজি দই ২৭০ টাকা ও দুই কেজি ওজনের দইয়ের ভাঁড় ৫৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। দই ছাড়াও এ মিষ্টান্ন ভান্ডারে পাতক্ষীর প্রতি কেজি ৮৪০ টাকা, ছানার আমেত্তি প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, ছানা ৮০০ টাকা, লালমোহন ৬০০ টাকা, চমচম ৩৪০ টাকা, রসগোল্লা ৩৪০ টাকা, কালোজাম ৩৪০ টাকা, ক্ষীর চপ ৪২০ টাকা, ক্ষীর কালোজাম ৪২০ টাকা, ছানার লেংচা ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের আশীর্বাদ মিষ্টান্ন ভান্ডারের লাল মোহন মিষ্টি
ছবি: প্রথম আলো

দই কিনতে আসা ক্রেতা ছানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই দোকানের দই অন্য দইয়ের তুলনায় স্বাদ বেশি। এ জন্য আশীর্বাদের দইটা আমরা বেশি পছন্দ করি।’

ঢাকা থেকে আসা গৃহবধূ কামরুন নাহার বলেন, ‘ছোটবেলায় এই দোকানের দই প্রচুর খেয়েছি। এখন ঢাকায় বসবাস করলেও নারায়ণগঞ্জে এলেই এই আশীর্বাদের দই কিনে নিয়ে যাই।’