হিমছড়ি সৈকতে পুঁতে রাখা তিমির কঙ্কাল উত্তোলন, ব্যবহৃত হবে গবেষণায়

বালুচরের ২০ ফুট নিচ থেকে উত্তোলন করা তিমির হাড়। বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতের বালুচরেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের হিমছড়ি সমুদ্রসৈকতের বালুচরে পুঁতে রাখা তিমির কঙ্কালটি গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য উত্তোলন করা হয়েছে। ২ বছর ৯ মাস আগে বালুচরে পুঁতে রাখা তিমিটির সব কটি হাড় উদ্ধার করেছেন বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিওআরআই) বিজ্ঞানীরা। আজ শুক্রবার থেকে হাড়গুলো জোড়া লাগানোর কাজ শুরু হবে।

হাড় উত্তোলন কার্যক্রম নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচার দ্বীপে বিওআরআই কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক তৌহিদা রশীদ এসব তথ্য জানান। এর আগে গত সোমবার থেকে তিমিটির হাড় উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হয়। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় ওই কার্যক্রম শেষ করা হয়।

বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল হিমছড়ির সৈকতে একটি ‘ব্রাইডস’ প্রজাতির তিমির অর্ধগলিত মরদেহ ভেসে আসে। গভীর বঙ্গোপসাগরে তিমিটির মৃত্যু হওয়ায় শরীরের বিভিন্ন অংশ পচে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। ওই দিনই তিমিটি ১০ ফুট মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হয়।

সব প্রক্রিয়া শেষে তিমি বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার জন্য কঙ্কালটি বিওআরআই ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হবে

বিওআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজের ধাক্কায় তিমিটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, তিমিটি উদ্ধারের সময় শরীরের কোনো অংশে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও মুখ ও মাথা থেঁতলানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে বা বিদেশে তিমির মরদেহের ফরেনসিক সক্ষমতা না থাকায় তাঁরা তিমিটির মৃত্যুর কারণ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না।

মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, পৃথিবীতে ৭৯ থেকে ৮৪ প্রজাতির তিমি আছে। এর মধ্যে ব্রাইডস তিমির প্রজাতি সর্বোচ্চ তিন থেকে চারটি পাওয়া যায়। এরা ইন্দো-প্যাসিফিক সমুদ্র অঞ্চলে বিচরণ করে। এটি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এ জন্য হাড়গুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পুঁতে রাখা তিমিটির ২৫০টির বেশি হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। তিমিটির সব কটি হাড়ই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে ব্রাইডস প্রজাতির তিমির হাড়ের সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি। কাল থেকে হাড় জোড়া লাগানোর কাজ শুরু হবে। শেষ হলে গণনায় ব্রাইডস প্রজাতির তিমির কতটি হাড় থাকে, তা বেরিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন
তিমিটির হাড় উত্তোলনের পর প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণ ও রি-অ্যাসেম্বলিং করার জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কারিগরি টিম গঠন করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

বিওআরআইয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক তৌহিদা রশিদ বলেন, ‘২০২১ সালের ১০ এপ্রিল তিমিটির ওজন ছিল প্রায় ৯ মেট্রিক টন, দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। ওই দিন তিমিটিকে সৈকতের বালুচরে ১০ ফুট গর্ত খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয়েছিল। গত সোমবার যখন হাড় উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করা হয়, তখন তিমিটির হাড়ের সন্ধান পাওয়া যায় ২০ ফুট নিচ থেকে। সর্বশেষ হাড় তুলতে আমাদের ২৫ ফুট পর্যন্ত গর্ত খুঁড়তে হয়েছে। হাড়ের সন্ধানে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে।’ তিনি জানান, বালুচরের ১০ ফুট খোঁড়ার পর গর্তে পানি জমে যায়। পরে সেচপাম্প লাগিয়ে পানি সেচে ও খননযন্ত্র দিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করেন। একপর্যায়ে ২০ ফুট গভীরে হাড় খুঁজে পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

তৌহিদা রশীদ বলেন, তিমিটির হাড় উত্তোলনের পর প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণ ও রি-অ্যাসেম্বলিং করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও বিওআরআইয়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কারিগরি টিম গঠন করা হয়েছে। তিমির হাড়গুলো জোড়া লাগিয়ে কঙ্কালটি গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে। তিনি বলেন, সব প্রক্রিয়া শেষে তিমি বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার জন্য কঙ্কালটি বিওআরআই ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হবে। পরে বিওআরআইয়ের আওতায় মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম স্থাপন কার্যক্রম শুরু হলে কঙ্কালটি সেখানে হস্তান্তর করা হবে। এটি সমুদ্রকে জানতে ও বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন