ঠাকুরগাঁও
তবু চলছে অবৈধ ইটভাটা
জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, জেলায় কেবল ছয়টি ইটভাটার হালনাগাদ লাইসেন্স রয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সাত দিনের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দিলেও সব ইটভাটা দিব্যি চলছে।
জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিবেশ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলার ১৮টি অবৈধ ইটভাটার কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছিল। ওই ভাটাগুলো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও সেগুলোর কার্যক্রম চলছে। শনি ও গতকাল রোববার ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈল উপজেলার ১৮ ইটভাটায় গিয়ে ইট তৈরির কার্যক্রম দেখা গেছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের তোয়াক্কা না করে লোকালয় ও ফসলি জমিতে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে চলছে অনেক ইটভাটা। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি ফসল ও গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে।
গত ৭ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও লালমনিরহাট জেলার অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম সাত দিনের মধ্যে বন্ধের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট চার জেলা প্রশাসককে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিকে ১৩ নভেম্বর দেশের সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ আর ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ জন্য দেশের জেলা প্রশাসকদের সাত দিনের মধ্যে কার্যকর নির্দেশনা দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও পরিবেশ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পরিবেশ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স আছে ৬টি ভাটার
ঠাকুরগাঁও জেলায় কয়টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর পঞ্চগড় কার্যালয় সূত্রমতে, জেলায় ১২৩টি ইটভাটা থাকলে চলতি মৌসুমে ১১১টিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এসব ইটভাটার ছয়টির হালনাগাদ ছাড়পত্র রয়েছে। তবে এর মধ্যে তিনটি ইটভাটা এখনো স্থাপন করা হয়নি। আইন অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়া ইটভাটা স্থাপন, পরিচালনা কিংবা চালু করা যাবে না। লাইসেন্স ইস্যুকরণ ও নবায়নের ক্ষেত্রে বলা রয়েছে, যে ব্যক্তি ইট প্রস্তুতকরণের লাইসেন্সের জন্য ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসক বা তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে পারবেন। তবে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে ইস্যু করা পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটার লাইসেন্সের জন্য কোনো আবেদন করা যাবে না। জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, জেলায় কেবল ছয়টি ইটভাটার হালনাগাদ লাইসেন্স রয়েছে।
অবৈধভাবে চলছে ভাটা
২ জানুয়ারি সদর উপজেলার জগন্নাথপুরের এমএইচ ব্রিকসে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইন লঙ্ঘন করে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভাটার মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করার পর ভাটার চুল্লির আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়। ৬ জানুয়ারি জগন্নাথপুর এলাকার মা ব্রিকসে অভিযান চালিয়ে ভাটার আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়। গত শনিবার সেখানে কয়লার পাশাপাশি কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়াতে দেখা গেছে।
১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সদর উপজেলার গোবিন্দনগরের এমএ ব্রিকস-২; শিবগঞ্জের এমএসবি ব্রিকস; দক্ষিণ বঠিনার সুপ্রিয় ব্রিকস ও এসকে ব্রিকস; মোলানীর কেএসবি ব্রিকস ও এসআই ব্রিকস; জগন্নাথপুরের কেআর ব্রিকস; বালিয়াডাঙ্গীর নাগেশ্বরী এলাকার এসজেবি ব্রিকস; দুওসুও এলাকার জনতা ব্রিকস; আমতলার এমবিবি ব্রিকস; রানীশংকৈলের এআর ব্রিকস; গ্রায়াগপুরের এসএবি ব্রিকস ও এমএবি ব্রিকস; পীরগঞ্জের পাড়িয়া এলাকার সেভেন বি ব্রিকস; ভেমটিয়া এলাকার ডিআর ব্রিকস, এসবি ব্রিকস ও এসবিএস ব্রিকসে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ভাটার চুল্লির আগুন নিভিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে ভাটাগুলোতে এখনো ইট পোড়ানো হচ্ছে।
রানীশংকৈলের গ্রায়াগপুরের এসএবি ব্রিকসের মালিক আজিজুর রহমান বলেন, ‘ইটভাটায় আমাদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করা আছে। এখন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বললে পথে নামা ছাড়া উপায় থাকবে না। আমরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছি এবং আমাদের কাগজপত্র আছে।’
সদর উপজেলার আরাজি ঝাড়গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে চলা কেএস ব্রিকসের মালিক আবদুস সোবহান বলেন, ‘ইটভাটা বন্ধ করে দিলেই চলবে না। আমাদের অসহায়ত্বের কথাও শুনতে হবে। আমরা তো আইন মেনে কয়লা দিয়ে ইট পোড়াচ্ছি।’ জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। যাঁরা নির্দেশ অমান্য করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’