সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে কেউ ধাক্কা না দিলেও ধপাস করে পড়ে গিয়েছিলেন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘সরকারও একদিন ধপাস করে পড়ে যাবে, কেউ টের পাবে না। এ জন্য আমাদের আন্তরিকভাবে আন্দোলন করতে হবে।’
আজ বুধবার দুপুরে সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা ১১টায় নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। কর্মসূচি থেকে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদ ও বিএনপির ১০ দফা দাবি আদায়ে ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশি-বিদেশি কেউ কেউ কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সি নিডস এক্সিট।’ তাঁকে যাওয়ার পথ লাগবে। সামনের দরজা, পেছনের দরজা না হলে জানালা দিয়ে যাবেন। তাঁদের ভাষায়, ‘সি হ্যাজ নো এক্সিট।’ তিনি বলেন, ‘কত পাপ করছে, কত অপকর্ম করছে! এ জন্য তিনি এক্সিট খুঁজে পাচ্ছেন না। এ কারণে আপনারা একটা এক্সিটের ব্যবস্থা করেন।’ এ সময় বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লুটপাটের ভাগ পান বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
২৭ দফা কর্মসূচির কথা তুলে ধরে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘এতে আমাদের দেওয়ার আছে, পাওয়ার মতো নাই। এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের জন্য কিছু রাখা হয়নি। এতে বলা আছে, প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে সবাই মিলে দেশটাকে গড়ে তোলা হবে।’
ভারতের কাছে আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার অনুরোধের বিষয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘তাঁর কথাবার্তার আগামাথা নেই। একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর পক্ষে এসব কথা মানানসই নয়। তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন। আব্দুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রনীতি বলতে শুধু দুটি দেশকেই চেনেন—একটি চীন, অন্যটি ভারত। চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখেন টাকা এনে লুটপাটের জন্য। আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন ক্ষমতায় থাকার জন্য। আর কোনো দেশ তাঁরা চেনেন না। এ জন্য আমাদের মূল পররাষ্ট্রনীতির প্রতিপাদ্য বিষয়—“কারও সঙ্গে শত্রুতা না, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব; কিন্তু জাতীয় স্বত্ব বিসর্জন দিয়ে নয়।”’
যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি বিএনপি যত কর্মসূচি দেয়, আওয়ামী লীগের কিছু লোক চিৎকার দিয়ে বলে, পাড়ায় পাড়ায় পাহারা দেবে। মহল্লায় মহল্লায় সতর্ক থাকবে। যেহেতু তারা সারাক্ষণ আমাদের পাহারা দেয়, এ জন্য তাদের নাম বাংলাদেশ পাহারা লীগ হওয়া ভালো।’
আওয়ামী লীগকে চোরদের আশ্রয়স্থল দাবি করে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ছাগলচোর ধরা পড়ে ছাত্রলীগের নেত্রী, গরুচোর ধরা পড়ে যুবলীগের নেত্রী। সব শেষ করে তারা ব্যাংক ডাকাতি শুরু করেছে। দেশের মানুষকে এসব থেকে মুক্ত করতে হবে। আমরা দেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের মুক্তি চাই।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতা সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান (জীবন), মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান, কেন্দ্রীয় সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জিকে গৌছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ, সহক্ষুদ্রঋণ ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান প্রমুখ।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী সমাপনী বক্তব্য দেন। কর্মসূচিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের গণ-অবস্থান
বিএনপির ১০ দফাসহ বিরোধী সব রাজবন্দীর মুক্তি ও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। আজ বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মুক্তমঞ্চে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) উপদেষ্টা ও সিলেট জেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. শফিকের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী।
অধ্যাপক মো. শফিক বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের অপসারণ ও ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার অবসান চাই। সংসদের উচ্চ কক্ষ গঠন, ফেডারেল পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা, প্রাদেশিক সরকার গঠনসহ সংবিধান সংশোধন করে সংস্কার ও অংশীদারত্বের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য।’ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে জনগণকে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোট সিলেট জেলার সদস্যসচিব আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জেএসডি সিলেটের যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী দেলওয়ার হোসেন, জেএসডি নেতা রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, হোসেন আহমদ, শ্রমিক নেতা রফিক মিয়া, ইমরান আহমদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা সুমন বাহাদুর, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক সুমন আহমদ, জেএসডির জেলা সদস্য মাসুদ আহমদ, বেলায়েত হোসেন, শ্রমিক জোটের সদস্য জুম্মা খান মিয়া প্রমুখ।