মেহেন্দীগঞ্জে মৎস্য বিভাগের আভিযানিক দলের ওপর আবার জেলেদের হামলা, আহত ২
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে কালাবদর নদের অভয়াশ্রমে অভিযান চালাতে গিয়ে আবারও হামলার শিকার হয়েছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা। আজ বুধবার সকালে উপজেলার বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের জালিয়াকান্দাসংলগ্ন নদ এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় মৎস্য বিভাগের আভিযানিক দলের সদস্যরা আত্মরক্ষায় দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও তাঁদের স্পিডবোটে থাকা সহায়তাকারী দুই শ্রমিক আহত হয়েছেন।
মৎস্য বিভাগ জানায়, আহত শ্রমিকদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে একই এলাকায় গত ৩ মার্চ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন। সে সময় সংঘবদ্ধ জেলেরা স্পিডবোটের ওপর হামলা চালানোর সময় নদে ছিটকে পড়ে মিরাজ ফকির (৩০) নামের এক জেলে মারা গিয়েছিলেন।
হিজলা উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, আজ সকালে খবর আসে, কালাবদর নদের শ্রীপুর এলাকায় নিষিদ্ধ বাঁধা জাল ফেলে অবৈধভাবে মাছ ধরছেন একদল জেলে। সকাল সাড়ে আটটার দিকে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহর নেতৃত্বে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ দুই উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিয়ে দুটি স্পিডবোটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় জেলেরা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কালাবদর নদে নিষিদ্ধ বাঁধা জাল, পাই জাল ও মশারির নেট জাল দিয়ে জাটকাসহ বিভিন্ন মাছ নিধন করছিলেন।
অভিযানে যাওয়া কর্মকর্তারা ওই জেলেদের মাছ ধরতে নিবৃত্ত করতে গেলে সেখানে এক থেকে দেড় শ জেলে সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠিসোঁটা ও ইট নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় ইটের আঘাতে স্পিডবোটে থাকা মৎস্য বিভাগের দুই শ্রমিক রুবেল সরদার (২৬) ও নবীন দেওয়ান (২৬) আহত হন। এ সময় সংঘবদ্ধ জেলেরা আভিযানিক দলের স্পিডবোটে হামলার জন্য এগিয়ে এলে কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
আহত শ্রমিকদের মধ্যে নবীন দেওয়ান মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রুবেল মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় আজ দুপুরে মেহেন্দীগঞ্জের কাজীরহাট থানায় ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লাহ এমদাদুল্লাহ বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮০ থেকে ৮৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। কাজীরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বিকেলে মামলা রেকর্ডের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
একের পর এক হামলা
বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ এবং চাঁদপুর অংশে মেঘনা ও এর শাখা নদী ঘিরে দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের অভয়াশ্রম। কিন্তু এখানে গত সরকারের আমলে হিজলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার নেতৃত্বে কয়েক হাজার নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার করা হতো। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বর্তমানে হিজলার বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এই মাছঘাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এসব অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। অবৈধভাবে মাছ ধরার বিরুদ্ধে প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে নামলে প্রায়ই তাঁদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মেঘনা নদীতে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান পরিচালনার সময় জেলেদের হামলার শিকার হয়েছিলেন ভোলা সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তাসহ সাতজন। মেঘনা নদীতে ইলিশের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে গত বছরের ১৮ অক্টোবর বরিশালের হিজলা উপজেলায় অভিযান চালানোর সময় ইউএনওর স্পিডবোটে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালান জেলেরা। এ ঘটনার সময় র্যাবের সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এর আগে ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেহেন্দীগঞ্জে অভিযান চালাতে গিয়ে সংঘবদ্ধ জেলেরা নৌকা নিয়ে স্পিডবোটের ওপর উঠিয়ে দিয়ে হামলা চালান। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন ও আনসার সদস্য তুহিন মিয়া আহত হয়েছিলেন। এ সময় একজন আনসার সদস্যের সঙ্গে থাকা একটি শটগান নদীতে পড়ে খোয়া যায়।
সব ধরনের মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রমের মধ্যে পাঁচটিতে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। ১ মার্চ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলাসংলগ্ন আন্ধারমানিক নদের অভয়াশ্রমটি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। এখানে গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর—দুই মাস নিষেধাজ্ঞা ছিল।