শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন

কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মানববন্ধন। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আজ বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওই মুক্তিযোদ্ধা বক্তৃতায় বিজয় দিবসের পোস্টারে শহীদ আবু সাঈদের ছবি দেওয়ায় সমালোচনা ও বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়ার প্রতিবাদে তাঁরা ওই মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে জেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক অভি চৌধুরী, ইকরাম হোসেন, শেখ মুদ্দাসসির তুশি, আফসানা আক্তার, আন্দোলনে শহীদ তরিকুল ইসলামের বড় ভাই জুয়েল আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। তাঁরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিস আলী ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ইদ্রিস আলী গণ–অভ্যুত্থান চব্বিশের শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করেছেন এবং জেলা প্রশাসকের সামনে বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক শুনেও না শোনার ভান করেন।

বক্তারা বলেন, ‘আমরা দেখছি, এখনো প্রশাসনে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা রয়ে গেছে। অবিলম্বে তাদের বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শহীদ আবু সাঈদ আমাদের চব্বিশের আন্দোলনের প্রেরণা। তাঁকে কটূক্তি করে এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে ওই মুক্তিযোদ্ধা। আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করে বক্তব্য দেওয়ার পরও জেলা প্রশাসক কেন কোনো প্রতিবাদ করেননি? মঞ্চে উপস্থিত থেকেও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান কোনো প্রতিবাদ না করায় তাঁকে কিশোরগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইদ্রিস আলীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে কিশোরগঞ্জের ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ১৬ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা ছিল। সেখানে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে আলোচক হিসেবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বিজয় দিবসের পোস্টারে শহীদ আবু সাঈদের ছবি দেওয়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘বিজয় দিবসের পোস্টারে আবু সাঈদের ছবি না দিয়ে যদি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি দেওয়া হতো, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। আবু সাঈদ শহীদ হইছে, কার সাথে যুদ্ধ করে শহীদ? কোন দেশের সাথে তারা যুদ্ধ করেছে? তারা আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে, দেশটাকে এক হাত থেকে আরেক হাতে পরিবর্তন করছে। তারা এখন আমাদের শাসন করবে। আমরা তাদের শাসন মেনে নিব। আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, বিজয় দিবসে কেন রাস্তাঘাটসহ সব জায়গায় আবু সাঈদের ছবি?’ পরে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া বা জেলা প্রশাসকও এ নিয়ে কিছু না বললেও পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া হয়।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, ‘সেখানে অনেক বক্তাই বক্তব্য রেখেছেন। এর মধ্যে যে মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তিনি তাঁর বক্তব্যে কী বলেছেন, বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক খেয়াল করতে পারেননি। আর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে কোন মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য দেবেন, সেটা মুক্তিযোদ্ধাদের পরামর্শক্রমে আগেই নির্ধারণ করা ছিল।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ইদ্রিস আলী যখন শহীদ আবু সাঈদকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখনই জেলা প্রশাসকের উচিত ছিল তাঁকে থামিয়ে দেওয়া। তাহলে বিষয়টি সেখানেই সমাধান হয়ে যেত। এর দায় জেলা প্রশাসকের ওপরে বর্তায়।