কুষ্টিয়ায় জয়ী চেয়ারম্যানের কেন্দ্রেই ভোট পড়েছে মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ

উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে বুধবার সকালে ভোট দিয়েছেন। ওই কেন্দ্রের ২ হাজার ৩৮০ জন ভোটারের মধ্যে সারা দিনে মাত্র ১৫৫ জন ভোট দিয়েছেনছবি: সংগৃহীত

মাত্র চার মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে ভোট পড়েছিল প্রায় ৪৩ শতাংশ। অথচ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়ার হার কমে ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমেছে। বুধবার সারা দেশের ১৩৯টি উপজেলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন ভোটের হার।

৪ লাখ ২০ হাজার ৮৩৩ ভোটারের উপজেলা কুষ্টিয়া সদরে নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৭৩ হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে ৬৭ হাজার ৪৬২ পেয়ে পুনরায় জয়ী হয়েছেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই। নির্বাচনে তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আল মামুন ৬৩ হাজার ৯১৭ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল মামুন জনতা ফ্রন্ট নামে একটি অনিবন্ধিত দলের চেয়ারম্যান। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া এলাকায়। তাঁকে মানুষজন খুবই চেনেন। পেশায় একটি এনজিওতে কর্মরত। আর আতাউর কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। সংসদ নির্বাচনে তিনি মাহবুব উল আলম হানিফের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন।

উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ও আওয়ামী লীগের জন্য প্রাপ্ত ভোট খুবই নগণ্য বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এই ভোট আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জেতালেও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরা। কয়েকজন স্থানীয় নেতা ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের অতি আত্মবিশ্বাসকে দায়ী করেছেন। এ ছাড়া জেতার জন্য প্রার্থীদের অনাকাঙ্ক্ষিত নানা তৎপরতাও সমান দায়ী বলে মন্তব্য করেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার ইকবাল মাহমুদ বলেন, ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ভোটারেরা বিমুখ হয়েছেন। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভেতর অনুপ্রবেশকারীরাও এর জন্য কিছুটা দায়ী। কুষ্টিয়া এখন সর্বত্র আওয়ামী লীগের জয়জয়কার। অথচ কর্মী সমর্থকেরাও ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন না।

দলের প্রবীণ নেতারাও মনে করছেন, কর্মীরাও ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট না দেওয়ার অনীহা আওয়ামী লীগকেই ভবিষ্যতে সংকটে ফেলতে পারে।

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা ঠিকমতো কাজ করতে পারে নাই। সাংগঠনিকভাবে তদারকি করতে পারলে এই সংকট নিরসন হয়ে যাবে।’

অনেক কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১০ শতাংশের কম

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে কিছু কিছু কেন্দ্রে তা ১০ শতাংশেরও নিচে নেমেছে।

কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রের ভোটার। তাঁরা দুজনই এবার এই কেন্দ্রে বুধবার সকালে ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৩৮০ জন। কেন্দ্রটিতে সারা দিনে ভোট পড়েছে মাত্র ১৫৫। অর্থাৎ এটি কেন্দ্রটির মোট ভোটের সাড়ে ৬ শতাংশ। ১৫৫ ভোটের মধ্যে আতাউর রহমান পেয়েছেন ১৪৬ ভোট।

কবুরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ২ হাজার ৩৪০ জন। ওই কেন্দ্রে আতাউর ভোট পেয়েছেন মাত্র ৭৩ ভোট। এই কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে মাত্র ৯০টি।

র্খোদ্দ বাখইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ২৯৪। সেখানে আতাউর আনারস প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ১০১ ভোট। মোট ভোট পড়েছে ১২৯ টি।
কুষ্টিয়া শহরের সিরাজুল হক মুসলিম হাইস্কুল কেন্দ্রে ২ হাজার ৯২৪ ভোটের মাত্র ১১৩ ভোট প্রদান করা হয়। সেখানে আতাউর পান ১০৮ ভোট।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুষ্টিয়ার সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব হলো তার প্রতি আস্থাশীল ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু নিজের লোকদেরও প্রার্থীরা ভোট কেন্দ্রে নিতে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিই লাভবান হবে।