১৫ বছরে নজরুল ইসলামের জমি বেড়ে ৪২ গুণ
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম ওরফে বাবু ও তাঁর স্ত্রীর সহায়–সম্পত্তি বহুগুণ বেড়েছে। ১৫ বছরের ব্যবধানে নজরুল ইসলামের অকৃষিজমি বেড়ে ৪২ গুণ হয়েছে। আর তাঁর স্ত্রী শূন্য থেকে ৩৫৫ শতাংশ অকৃষিজমির মালিক হয়েছেন।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তাঁর দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার এ তথ্য পাওয়া গেছে। নজরুল ইসলাম এবার নিয়ে চতুর্থ দফায় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
নজরুল ইসলাম পেশায় ব্যবসায়ী (আমদানিকারক ও সরবরাহকারী)। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন এমএসএস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)। তাঁর স্ত্রী সায়মা ইসলাম আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজরুল ইসলাম তাঁর হলফনামায় পেশার ঘরে উল্লেখ করেছিলেন তিনি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। ওই ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তখন তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা থেকে আয় দেখানো হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নজরুল ইসলামের নগদ ৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
সে সময় স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নজরুল ইসলাম শুধু নিজের নামে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ অকৃষিজমি দেখিয়েছিলেন, যার মূল্য ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে কোনো সম্পদ ছিল না।
গত ১৫ বছরে এই সংসদ সদস্য ও তাঁর স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বহুগুণ বেড়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় নজরুল ইসলাম নিজের নামে অকৃষিজমি ৩৬১ শতাংশ দেখিয়েছেন, যার মূল্য ২ কোটি ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ২ দশমিক ২ শতাংশ জমির ওপর দালানের মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের ৮১ লাখ টাকার মূল্যের ফ্ল্যাট একটি, পূর্বাচল রাজউক নিউ মডেল টাউনে ১০ কাঠার প্লট ৪১ লাখ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজার টাকার সম্পত্তি।
নজরুল ইসলামের স্ত্রীর নামে ৩৫৫ শতাংশ অকৃষিজমি রয়েছে, যার মূল্য ৯৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা। ৩৯ শতাংশ জমির ওপর একতলা আধা পাকা দালান রয়েছে, যার মূল্য ৩৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
সম্পত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৈতৃকসূত্রে এসব সম্পত্তি পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এসব জমিজমার অনেক কিছু আমি বুঝি না। আমার আইনজীবী বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।’
এ আসন থেকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা আলমগীর সিকদার। শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘স্বশিক্ষিত’। অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা ছিল। ওই মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। তাঁর পেশা ব্যবসা। তাঁর বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নগদ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ব্যাংকে জমা আছে ১৬ হাজার ৯১৫ টাকা। স্ত্রীর নামে একটি গাড়িসহ দুই ভরি সোনা ও ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা রয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। তাঁর পেশা ব্যবসা; বার্ষিক আয় ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। মো. শাহজাহানের ব্যবসা ডেইরি ফার্ম। ব্যবসা থেকে বছরে আয় ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। তাঁর নিজের ও স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি নিজে ও স্ত্রীর নামে ১০০ শতাংশ কৃষি ও অকৃষিজমি রয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জি কে মামুন দিদারের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তাঁর বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ সাত লাখ টাকা। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আরও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জাকের পার্টির মো. শাহজাহান ও তৃণমূল বিএনপির আবু হানিফ।