ফরিদপুরে মহাসড়ক অবরোধ ও পুলিশের ওপর হামলায় আ.লীগ নেতার নামে মামলা
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধ, সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলা করার অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে।
৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করে করা এ মামলায় আওয়ামী লীগের ওই নেতার ছেলে ও ভাইকেও আসামি করা হয়েছে।ঘটনার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর গত শনিবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
ওই মামলায় নাম উল্লেখ করা ৪৮ জনের মধ্যে উপজেলার আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার মাতুব্বরকে (৫৫) ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। দেলোয়ার মাতুব্বর ওই ইউনিয়নের সোয়াদী গ্রামের মৃত ওমর আলী মাতুব্বরের ছেলে। তিনি ২০২১ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। মামলার ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে দেলোয়ার মাতুব্বরের ছেলে মেহেদী মাতুব্বরকে (২০) ও ১৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে দেলোয়ার মাতুব্বরের ভাই আবুল মাতুব্বরকে (৪৫)।
এসআইয়ের মামলার বর্ণনা অনুযায়ী, গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল সোয়া চারটার দিকে তিনি জানতে পারেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ভাঙ্গার সোয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাঙ্গা, নগরকান্দা, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গাসহ আশপাশের উপজেলা থেকে জামায়াত–বিএনপির অঙ্গসংগঠনের দুষ্কৃতকারীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাঁশ ও কাঠের গুঁড়িতে আগুন দেয়। যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাসহ জনগণের জানমালের ও চলাচলকারী যানবাহনের ক্ষতি সাধান করছে। এ খবর শুনে তিনি পৌনে পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান উল্লেখিত আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা মহাসড়কের মাঝখানে কাঠের গুঁড়ি ও বাঁশে অগ্নিসংযোগ করে মহাসড়ক অবরোধ করে ঢাল, কাতরা, কাঠের লাঠি, বাঁশের লাঠি, ইটের টুকরা, রামদা ইত্যাদিতে সজ্জিত হয়ে উচ্ছৃঙ্খল ও বেপরোয়া আচরণ করছেন। তিনি (বাদী) হাত মাইক নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরে গিয়ে যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন। আসামিরা এ অনুরোধ উপেক্ষা করে আরও বেপরোয়া হয়ে তাঁরা দেশি অস্ত্র নিয়ে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা চালান।
এজাহারে বলা হয়, এ হামলায় তিনিসহ ভাঙ্গা থানার এসআই অমিও মজুমদার ও কনস্টেবল হানিফ, ফারুক, নাজমুল, সজীব, আহাদুল জখম হন।
এজাহারে আরও বলা হয়, এ অবস্থায় জানমাল রক্ষা ও মহাসড়কে যানবাহন স্বাভাবিক রাখার জন্য ৩১টি সিসার গুলি ও ১০টি রাবার বুলেট ছুড়ে এবং ভাঙ্গা ও নগরকান্দা থানার অতিরিক্ত পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
পুলিশের করা এ মামলায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা, তাঁর ছেলে ও ভাইকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে ভাঙ্গা থানা–পুলিশ এ পর্যন্ত এ মামলার আসামি হিসেবে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান (৬২), কালামৃধা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিন্টু আকন্দ (৪০) ও ঢাকা নিউমার্কেট যুবদলের সভাপতি মো. হারুন মাতুব্বরকে (৫২)।
আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে কথা হয় আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে।
আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কমল চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডের যে জায়গায় এ ঘটনা ঘটেছিল, তার পাশে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দোলোয়ারের বাড়ি অবস্থিত। তিনি (দেলোয়ার) গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘটনা দেখতে বের হয়েছিলেন। দেলোয়ার, তাঁর ছেলে ও ভাইকে কেন আসামি করা হয়েছে, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের জানানো হয়েছে।’
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানির শিকার এড়াতে ফরিদপুর জেলার শত শত নেতা–কর্মী বর্তমানে ঘরছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে বিএনপি সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।