পদ্মা সেতু প্রকল্পসংলগ্ন চরে ভাঙন, স্থায়ী সমাধানের দাবিতে মানববন্ধন
শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নাওডোবা ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট এলাকার নদীর তীরে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে নদীর তীর রক্ষা, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং সহায়তার দাবি জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তের আশপাশের এলাকায় নদী ভাঙছে। গত তিন মাসে ওই এলাকার পাইনপারা চরে ভাঙনের শিকার হয়ে প্রায় ২৫০ পরিবার ঘর-বাড়ি হারিয়েছে। নদীতে বিলীন হয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের জিরোপয়েন্ট এলাকায় অন্তত ১০০ মিটার অংশ পদ্মা নদীতে ধসে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
পূর্ব নাওডোবা এলাকার বাসিন্দা বাদশা মাতবর বলেন, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো কোথায়ও আশ্রয় পায়নি। তাঁদের ভাগ্যে কোনো সহায়তাও জোটেনি। ওই পরিবারগুলো সেতু বিভাগের একটি জমিতে ঝুপড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। নিরুপায় হয়ে এলাকার মানুষ একসঙ্গে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন। দাবি না মানলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
একই এলাকার বাসিন্দা মোকলেছ মাতবর বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের পাশের আলম খাঁর কান্দি, ওছিম উদ্দিন মাতবর কান্দি ও কালাই মোড়লের কান্দি গ্রামগুলোর অন্তত ৫০০ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। জাজিরার নাওডোবা, পালেরচর, বড়কান্দি, জাজিরা ও বিলাশপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন ওই বাঁধ ও লাগোয়া সড়ক দিয়ে চলাচল করে। বাঁধ ও সড়কটি ভেঙে গেলে ওই এলাকার মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা চাই দ্রুত এ এলাকার ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হোক।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা থেকে শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া, সেনানিবাস, থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের ২০১২ সালে জমি অধিগ্রহণের সময় নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। নদী ভাঙনের কবল থেকে প্রকল্প এলাকাকে রক্ষার্থে সেতুর থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে সেতু বিভাগ।
পদ্মা সেতুর পূর্ব দিকে নদীর মাঝে পাইনপারা চর অবস্থিত। চরটির ছয় গ্রামে অন্তত দুই হাজার পরিবারের বসবাস। নাওডোবা এলাকায় সেতুর বিভিন্ন অবকাঠামোর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলে মালিকেরা পাইনপারা চরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। চরটি গত আগস্ট মাস থেকে ভাঙনের কবলে পড়ে। অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভাঙনে চরটির অন্তত ২৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে দুটি মাদ্রাসা ও তিনটি মসজিদ। এ ছাড়া গত ৫ অক্টোবর পাইনপারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ তীরে খোলা আকাশের নিচে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে।
এলাকাটিতে বাঁধ নির্মাণের জন্য জেলার পাউবোকে অনুরোধ করেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধ ও পাইনপারার চরের নদী ভাঙন আমাদের শঙ্কায় ফেলেছে। কয়েক হাজার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। পাউবোকে অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু ভাঙন রোধে তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’