ছাত্রদের ব্যানারে বিক্ষোভের পর বগুড়ায় ২ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের পদত্যাগ
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভের মুখে শহরের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। আরেকটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তাঁরা। তবে ছাত্রদের আরেকটি পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছে, বর্তমানে বগুড়ায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা দাবিতে যে বিক্ষোভ হচ্ছে, তার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত তিন দিনে শহরের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বিক্ষোভের মুখে ইতিমধ্যে বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের (এপিবিএন) অধ্যক্ষ এ টি এম মোস্তফা কামাল ও বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম পদত্যাগ করেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুস্তাফিজুর রহমানও।
এদিকে আজ রোববার বগুড়া প্রেসক্লাবে একদল শিক্ষার্থী নিজেদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এতে জেলা ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিয়তি সরকার বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে শাস্তি চেয়ে দাবি তুলতে পারি। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের না জানিয়েই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ–সমাবেশ হচ্ছে। বিচ্ছিন্নভাবে এসব করতে গিয়ে কেউ বিপদে পড়লে এর দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা নেবে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর রাতারাতি বগুড়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের হিড়িক পড়ে। এর মধ্যে ৮ আগস্ট বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এ টি এম মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ করেন লোকজন। বিক্ষোভের মুখে ওই দিনই মোস্তফা কামাল পদত্যাগ করেন।
বগুড়া ৪ এপিবিএনের অধিনায়ক ও এপিবিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক দাবি করেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল নিজেই পদত্যাগ করেছেন। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পুলিশ লাইনস স্কুলে প্রশাসক নিয়োগ
গতকাল শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন ও বর্তমান একদল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কিছু শিক্ষক। বিক্ষোভকারীরা অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করতে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও পুলিশ সুপারকে সময় বেঁধে দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাতেই পরিচালনা পর্ষদের সভা করেন পুলিশ সুপার। সেখান থেকে অধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হয়। পরে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অধ্যক্ষ তাঁর পদত্যাগপত্র পরিচালনা পর্ষদের কাছে পাঠিয়ে দেন।
অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম একই সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘ এক যুগ তিল তিল করে শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলাম। অথচ মৌলবাদী একটি গোষ্ঠী রাতারাতি অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের উৎসবে নেমেছে। তাদের ইন্ধনে কোমলমতি কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বহিরাগতরা বিনা কারণে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।’
পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, শাহাদৎ আলম ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করে নিজ থেকেই পদত্যাগ করেছেন। আপাতত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতারকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে।
এদিকে বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ সকাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।
অধ্যক্ষ মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘একটি বহিরাগত সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী বিনা দোষে কতিপয় শিক্ষার্থীকে উসকে দিয়ে আমার পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করছে। বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদকে জানানো হয়েছে।’
বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যক্ষের পদত্যাগের পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেসব সত্য হলেও একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনো সময় দিতে চান না। সেখানে সেনাবাহিনী পাঠানো হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলে অধ্যক্ষের পদত্যাগ ছাড়া বিকল্প নেই।