বিএসএফের গুলিতে আহত বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু, স্বজনদের আহাজারি
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আহত বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলা শহরের একটি হাসপাতালে বিএসএফের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর স্বজনেরা আহাজারি করছেন।
মারা যাওয়া তরুণের নাম লিটন মিয়া (১৯)। তিনি উপজেলার দুর্গাপুরের দীঘলটারী গ্রামের শানকারচড়া মহল্লার মোকছেদুল হক ও দুলালি খাতুন দম্পতির ছেলে। গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে দুর্গাপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে তিনি আহত হয়েছিলেন।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ লিটন মিয়া আহত হওয়ার পর লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফের কাছে চিঠি দেন। আজ বুধবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি-৭৫ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের বরাত দিয়ে মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ বলেন, লিটন মিয়ার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আজ সন্ধ্যার পর যেকোনো সময় বিএসএফের পক্ষ থেকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আজ দুপুরে লিটন মিয়াদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে লিটনের মা দুলালি খাতুন বলেন, ‘মোর ছাওয়াটা সীমান্তে যায়া কোনো দোষ করি থাকলে তাক ধরি ভারতের জেলোত না দিয়া বিএসএফ এদোন করি গুলি করি মারি ফেলাইল! ইয়ার (এর) বিচার চাই, ক্ষতিপূরণ চাই।’
লিটনের খালা আদুরি খাতুন বলেন, গণমাধ্যমে খবর শুনে বোনের বাড়িতে তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। বোনকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা নেই।
শোকার্ত স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার রাতের খাবার খেয়ে লিটন রাত ৯টার দিকে এক বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেই রাতে আর ফিরে আসেননি। মঙ্গলবার সকালে জানা যায়, লিটন মিয়া বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের কুচবিহারে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে তাঁরা মৃত্যুর খবর পান।
লিটন মিয়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। তিনি পাওয়ার টিলার চালাতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করতেন। লিটন মিয়ার চাচা মো. শাহিন বলেন, লিটনের এভাবে মৃত্যু হওয়ায় পরিবারটির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এখন যদি বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিত, তাহলে পরিবারটির উপকার হতো।
লিটন মিয়ার ছোট বোন মিম আক্তার (১২) স্থানীয় সাবেরা খাতুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট ভাই লিমন মিয়া (১৪) দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে তারাও কাঁদছিল। আর ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাবা মোকছেদুল হক বাক্রুদ্ধ হয়ে গেছেন। কোনো কথা বলছেন না। কিছুক্ষণ পরপর মূর্ছা যাচ্ছিলেন, আর শুধু চোখের পানি মুছছিলেন।