কার্যালয়ে ফিরছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কাউন্সিলররা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলররা অবশেষে অফিস করা শুরু করেছেন। সিটি করপোরেশনের ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আছেন ৫৫ জন। এর মধ্যে অন্তত ১০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা বিভিন্ন নথিপত্র ও সনদে সইও করছেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা অফিস করলেও সেবাগ্রহীতার সংখ্যা এখনো কম। তবে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এখনো প্রধান কার্যালয়ে আসছেন না।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান। ওই দিন সিটি করপোরেশনের মেয়রের বাড়ি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলদের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। সিটি করপোরেশনের মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের অনুপস্থিতি সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা অফিসে আসেননি। তবে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে এসেছেন। অন্তত ১০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস করেছেন। আবার অনেকে সশরীরে অফিস না করলেও বিকল্প উপায়ে কাজ করছেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে সেবা পাচ্ছেন মানুষ। তবে মেয়র অফিস না করায় সিটি করপোরেশনের সার্বিক কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।

সিটি করপোরেশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ১২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফরোজা কালাম, জালালাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সাহেদ ইকবাল, পাঁচলাইশের মো. শফিকুল ইসলাম, পশ্চিম বাকলিয়ার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, ফিরিঙ্গিবাজারের হাসান মুরাদ, আলকরণের আবদুস সালাম, গোসাইলডাঙ্গার মোর্শেদ আলী, দক্ষিণ আগ্রাবাদের জাফরুল হায়দার, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকি সেন ও তছলিমা বেগম।

সিটি করপোরেশনের তিনজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতির কারণে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। তাঁরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কার্যালয়ে যাওয়া শুরু করবেন। তবে কেউ কেউ কার্যালয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য এক টানা কার্যালয়ে থাকছেন না।

নগরের আলকরণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম কয়েক দিন কার্যালয় বন্ধ ছিল। তবে এখন নিয়মিত অফিস করছেন। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, মশার ওষুধ ছিটানো, জন্মনিবন্ধনসহ বিভিন্ন সনদ সব সেবা কার্যক্রম চালু করেছেন। তবে এখনো সেবাগ্রহীতার সংখ্যা কম।

একই ধরনের কথা জানিয়েছেন প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম ও সাহেদ ইকবাল। তাঁরা বলেন, সাধারণ মানুষ হয়তো অফিস চালুর বিষয়টি এখনো জানেন না। আবার পরিস্থিতির কারণে তাঁরা ওয়ার্ড কার্যালয়ে আসছেন না। এসব কারণে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা কম। তবে ধীরে ধীরে বাড়বে।

কর্মকর্তা-মেয়রের সহকারীর পদত্যাগ দাবি

গতকাল দুপুরে একদল শিক্ষার্থী নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তাঁরা এই সময় সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী হোসেন আওরঙ্গজেবের পদত্যাগ দাবি করেন। এর মধ্যে আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে জোর করে সই নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে এই খবর পেয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে ছুটে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ। তিনি তাঁদের ফিরিয়ে আনেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই শিক্ষার্থীরা সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা না বলে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তাই তিনি গিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে আনেন। আজ বুধবার সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বৈঠক করবেন। সেখানে প্রয়োজনীয় দাবি উত্থাপন করা হবে।