বরিশালে আ.লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রমিক ইউনিয়নে পদ বাগানো শ্রমিক দল নেতাকে বহিষ্কার

মোস্তফা কামালছবি: সংগৃহীত

সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বরিশাল মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মোস্তফা কামালকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মহানগর শ্রমিক দলের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মঞ্জুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বহিষ্কৃত মোস্তফা কামাল বরিশাল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মোস্তফা কামালকে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম এ বহিষ্কারাদেশ অনুমোদন দিয়েছেন।

মহানগর শ্রমিক দলের একটি সূত্র জানায়, মহানগর শ্রমিক দলের সদস্য মোস্তফা কামাল গত বছরের অক্টোবরে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। খায়ের আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর অনুসারী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অসীম দেওয়ান নগরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড নথুল্লাবাদ বাস মালিক সমিতির সভাপতি হন এবং মোস্তফা কামালকে শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক করেন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।

সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অসীম দেওয়ান গা ঢাকা দেন। এরপর মহানগর বিএনপির সাবেক ও কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী এক নেতার ভাইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় মোস্তফা কামাল নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড শ্রমিক ইউনিয়নে দখলদারত্ব বজায় রাখেন। এতে শ্রমিক দল ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থানীয় শ্রমিক দল ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিষয়টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোস্তফা কামালকে বহিষ্কার করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা আমি নিজেও জানি না। আমি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি, কেউ প্রমাণ দিতে পারলে বরিশালেই থাকব না। অসীম দেওয়ানের সঙ্গে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডের শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। তাঁরা আমাকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি দিইনি। এরপরও পেশাদার শ্রমিক হওয়ায় আমাকে ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়েছিল। শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গত ২৫ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে যোগ দিয়েছি, দলীয় পরিচয়ে নয়। মূলত শ্রমিক দলের বর্তমান আহ্বায়ক আমাকে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল, আমি রক্ষা করিনি বলে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ফয়েজ আহমেদ খান প্রথম আলোক বলেন, মোস্তফা কামালর সংগঠনবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অনেক তথ্যপ্রমাণ কেন্দ্রীয় শ্রমিক দল নেতাদের কাছে গেছে। এসব তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার পতনের পর বরিশালের কোনো বাসস্ট্যান্ড শ্রমিক দলের কেউ দখল করেননি। তাঁরা যা করার নিয়মতান্ত্রিকভাবেই করবেন। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এমন কাজে কেউ জড়িত থাকলে তাঁর স্থান শ্রমিক দলে হবে না। নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড দখলের বিষয়ে বলেন, ‘এসবের সঙ্গে শ্রমিক দল জড়িত নয়। মোস্তফা কামালকে কেন্দ্রীয় কমিটি বহিষ্কার করেছে, এখন আর এতে শ্রমিক দলের কারও কোনো দায় রইল না।’