পটুয়াখালীতে মন্দির নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ২৫
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় মন্দির নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী দুই পক্ষের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
আজ বুধবার সকালে ও গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রণগোপালদী ইউনিয়নের গুলি আউলিয়াপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষ্ণ ও মতুয়া ভক্তদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গুলি আউলিয়াপুর গ্রামে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে একটি মন্দির রয়েছে। ওই মন্দিরটি কৃষ্ণ মন্দির হিসেবে পরিচিত, যা মানতে নারাজ মতুয়া ভক্তরা। প্রায় এক বছর আগে মতুয়া ভক্তরা ওই কৃষ্ণ মন্দিরের পাশে আরেকটি মন্দির প্রতিষ্ঠিত করে পূজা প্রার্থনা শুরু করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিরোধ আরও চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
এর পর থেকে মন্দির নিয়ে তাঁদের দুই পক্ষের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মতুয়া ভক্ত কৃষ্ণা রানী মন্দিরে পূজা দিতে এলে কৃষ্ণ ভক্ত লক্ষ্মী রানীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন এসে সংঘর্ষে জড়ান। এতে দুই পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
ওই সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। দুই দফায় সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কৃষ্ণা রানী (৩৫), নিকট চন্দ্র হাওলাদার (১৭), ভিবাস চন্দ্র হাওলাদার (৩০), ঝুমুর রানী (২৫), লক্ষ্মী রানী (৪০), সুবর্না রানী (১৫), অন্তরা রানী (১৫) ও চপলা রানীকে (২৫) মঙ্গলবার রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আজ সকালে গুরুতর আহত মন্টু হাওলাদার (৪০), সন্তোষ হাওলাদার (৪৫), সজল হাওলাদার (৩৫), দিবাংসু হাওলাদার (৩০), স্বপন হাওলাদার (৪৫) ও তপন হাওলাদারকে (৩৫) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মতুয়া ভক্তের আহত কৃষ্ণা রানী জানান, তাঁরা ভিন্ন একটি জায়গায় মন্দির নির্মাণ করে পূজা প্রার্থনা করেন। মন্দির নির্মাণ করার পর থেকে কৃষ্ণ ভক্তরা এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। গত কয়েক মাস আগে কৃষ্ণ ভক্তরা তাঁদের (মতুয়া) মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করে খালে ভাসিয়ে দেন। তাঁরা গায়ে পড়ে ঝগড়া করেন।
কৃষ্ণ ভক্তের আহত লক্ষ্মী রানী এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কৃষ্ণ মন্দিরের জায়গা দখল করে মতুয়া ভক্তরা আরেকটি মন্দির নির্মাণ করেছেন। এ নিয়ে এক সপ্তাহ আগে দুই পক্ষের মধ্যে ঝগড়া হয়। ওই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মতুয়া ভক্তদের ২০-২২ জন তাঁদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন।
দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করেছেন এবং আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য দশমিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে। কৃষ্ণ ভক্তদের পক্ষ মামলা দায়েরের জন্য থানায় অবস্থান করছেন। তবে অধিকতর তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।