পাবনায় হাসপাতালে ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য বিনা পয়সায় সাহ্‌রি

স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্যাকেট করার পর হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাঁদের স্বজনদের হাতে সাহ্‌রি তুলে দিচ্ছেন স্কয়ার গ্রুপের কর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতেছবি: প্রথম আলো

সালেহা বেগমের (৪৫) বাড়ি পাবনার চাটমোহরে। শিশুসন্তানকে নিয়ে কয়েক দিন ধরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আছেন। কোনো দিন সঙ্গে থাকছেন স্বামী, কোনো দিন বোন। রোজা রাখার জন্য সাহ্‌রি কোথায় করবেন, তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন।

আলম মুন্সি শহরের রায়বাহাদুর গেট এলাকায় রাতের বাজারে মাছ বিক্রি করেন। তিনিও রোজা রাখেন। কিন্তু প্রতিদিন মাছের দোকান গুছিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সাহ্‌রির সময় শেষ হয়ে যায়। ফলে তাঁকেও সাহ্‌রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।

এমন মানুষদের জন্য বিনা মূল্যে সাহ্‌রির আয়োজন করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশন’। স্কয়ার গ্রুপ প্রতি রাতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাঁদের স্বজনদের জন্য ৬০০ প্যাকেট এবং শহরের ছিন্নমূল মানুষের জন্য তহুরা–আজিজ ফাউন্ডেশন ৩০০ প্যাকেট সাহ্‌রি সরবরাহ করছে।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ রোগী জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসেন। পবিত্র রমজান মাসে রাতে তাঁদের জন্য সাহ্‌রির আয়োজন করা খুবই কঠিন হয়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনা করে ২০২৩ সাল থেকে স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর নির্দেশনায় হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাঁদের স্বজনদের জন্য স্কয়ার গ্রুপ সাহ্‌রির আয়োজন শুরু করে। স্কয়ারের কর্মীরা দিনের কাজ শেষ স্ব–উদ্যোগে সাহ্‌রির আয়োজন করেন। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার রান্না ও প্যাকেটজাত শেষে নিজেরাই হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাঁদের স্বজনদের হাতে পৌঁছে দেন। খাবার তালিকায় থাকে সাদা ভাত, সবজি এবং দিনভেদে খাসির মাংস, মুরগির মাংস, মাছ ও ডিমের যেকোনো একটি।

রাতের শ্রমিক ও ছিন্নমূল মানুষদের হাতে সাহ্‌রি তুলে দিচ্ছেন তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। গত বুধবার রাতে
ছবি: প্রথম আলো

অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশন সাহ্‌রি বিতরণের কাজ শুরু করে ২০০৯ সালে। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানটি শহরের ছিন্নমূল মানুষ ও রাতের শ্রমিকদের জন্য ৩৫ প্যাকেট সাহ্‌রি সরবরাহ করত। বর্তমানে তারা প্রতি রাতে ৩০০ প্যাকেট সাহ্‌রি সরবরাহ করছে। শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, অনন্ত বাজার ও আবদুল হামিদ সড়কসহ জেলা শহরের ৮টি পয়েন্টে এই সাহ্‌রি বিতরণ করা হচ্ছে। শহরের ছিন্নমূল মানুষ থেকে শুরু করে রিকশাচালক, নৈশ প্রহরী ও পরিবহনশ্রমিকেরা এই সাহ্‌রি পাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি রাত দুইটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের আবদুল হামিদ সড়কে অটোরিকশায় সাজানো খাবার প্যাকেট। সেগুলো নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন কয়েকজন যুবক। কারও সাহ্‌রির প্রয়োজন হলেই হাতে তুলে দিচ্ছেন একটি প্যাকেট। কাজটি করছেন তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা।

রাস্তা থেকে ঘুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, গাড়িভর্তি সাহ্‌রির প্যাকেট এল হাসপাতালে। হাতে হাতে তা নামিয়ে নিলেন স্কয়ারের কর্মীরা। সবাই মিলেমিশে শুরু করলেন সাহ্‌রি বিতরণ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রোগী ও তাঁদের স্বজনদের হাতে হাতে পৌঁছে গেল সাহ্‌রির প্যাকেট।

হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা বলেন, হাসপাতালে আসার পর থেকে তাঁরা সাহ্‌রি নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলেন। রাত হতেই দেখলেন ভিন্ন চিত্র। ঠিক সময়মতো সাহ্‌রি হাতে পেয়ে গেলেন। এতে তাঁদের অনেক উপকার হয়েছে।

স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে সাহ্‌রি। গত বৃহস্পতিবার রাতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

জেলার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর গ্রামের আবদুল মোমেন বাবাকে নিয়ে তিন দিন হাসপাতালে আছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগী থাকলে এমনিতেই দুশ্চিন্তায় কাটে। এ অবস্থায় সাহ্‌রি জোগাড় খুবই কঠিন হয়ে যায়। স্কয়ারের এই উদ্যোগ মানুষের অনেক উপকারে আসছে।

হাসপাতালে সাহ্‌রি বিতরণ করছিলেন স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক আবদুল খালেক। তিনি বলেন, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর নির্দেশনাতে তিন বছর ধরে এই আয়োজন হচ্ছে।

তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক দেওয়ান মাহবুব বলেন, ‘আমাদের সাধ অনেক, তবে সাধ্য কম। কিছু হৃদয়বান মানুষের সহযোগিতায় আমরা সাহ্‌রি বিতরণ কার্যক্রমটি চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষ উপকৃত হচ্ছে, এতেই সবাই শান্তি পাচ্ছেন।’

এ প্রসঙ্গে পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরেই স্কয়ার গ্রুপ ও তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশন সাহ্‌রির এই আয়োজন করছে। তিনি নিজেও কয়েক দিন তাদের সঙ্গে সাহ্‌রি বিতরণে অংশ নিয়েছেন। প্যাকেটটা হাতে পাওয়ার পর সবাই যে নির্ভার হন, সেটা খুবই ভালো লাগার অনুভূতি। উদ্যোক্তাদের তিনি সাধুবাদ জানান।

আরও পড়ুন