ঢাকার অদূরে সাভার ও ধামরাই উপজেলায় শিল্পকারখানার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৮০০টি। পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন উপলক্ষে এসব শিল্পকারখানায় পর্যায়ক্রমে ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে। ছুটি ঘোষণার পর গত দুই-তিন দিনের তুলনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। মহাসড়ক দুটিতে চাপ বাড়লেও যানজটের অস্বস্তি নেই বললেই চলে। তবে কয়েকটি স্থানে যানবাহনের ধীরগতি আছে।
মূলত এ দুটি মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, শিল্পকারখানাগুলোতে ধাপে ধাপে ছুটি ঘোষণা করা এবং সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা যানজট নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করায় মহাসড়কে যানজট নেই বলে মনে করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে সড়ক পুরোপুরি যানজটমুক্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাঁদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া কিছু পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
আজ শুক্রবার মহাসড়ক দুটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল আটটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর থেকে বিশমাইল পর্যন্ত এলাকাটিতে যানবাহন থেমে থেমে চলছিল। তবে সাড়ে নয়টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। সকাল ১০টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ড ও হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে নিরবচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চলাচলের লেনটি স্বাভাবিক থাকলেও সার্ভিস লেনে যানবাহনগুলোকে ধীরগতিতে চলতে দেখা যায়। এ ছাড়া সকাল সাড়ে আটটার দিকে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহন চলে থেমে থেমে। প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
আজ বিকেল পাঁচটার দিকে নবীনগর দূরপাল্লার বাস টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ভিড় দেখা যায়। এ ছাড়া টার্মিনাল সংলগ্ন মহাসড়কের সার্ভিস লেনে যাত্রী পরিবহনের বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে এবং কয়েকটি বাসকে সড়ক আটকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে নিরবচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চলাচলের লেনটি ছিল স্বাভাবিক। মহাসড়ক দুটির নবীনগর ও বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
সকালে কিছুটা ভোগান্তি
ঢাকা থেকে প্রাইভেট কারে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে যাচ্ছিলেন মো. রাজিব। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিশমাইল এলাকায় পৌঁছালে গাড়িগুলো থেমে থেমে চলতে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন তাঁরা। এ সময় তিনি বলেন, ‘ভোগান্তির কথা বলে শেষ নেই। প্রতিবছর ঈদের সময় একই ঘটনা ঘটে। এগুলো দেখার কেউ নেই, শোনারও কেউ নেই। যানজট নিরসনে প্রশাসনের লোকজনকে এখনো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখিনি।’
বগুড়া থেকে গতকাল রাতে পিকআপে করে ঢাকায় মুরগি নিয়ে এসেছিলেন মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা খারাপ। বগুড়া থিকা গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় গাড়ি ছাড়ছিলাম। রাত দুইটায় ঢাকা পৌঁছাইছি। এখন আবার আটকা পড়ছি।’
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পরিবহনভেদে তাঁদের দেড় থেকে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়েছে। গাবতলী থেকে সেলফি পরিবহনের বাসে উঠেছেন স্বর্ণা খাতুন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পাবনা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বাড্ডা থেকে প্রথমে গাবতলী এসেছি। এরপর গাবতলী থেকে বাসে উঠছি। গাবতলীর আগে একটু জ্যাম পেয়েছিলাম। এরপর নবীনগর এসে জ্যামে পড়লাম। পাটুরিয়া পর্যন্ত যাব। আগে পাটুরিয়া পর্যন্ত ২০০ টাকা নিত, এখন ৩০০ টাকা নিছে।’
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাইপাইল থেকে টাঙ্গাইলে যাবেন মো. আনসার আলী। তিনি অভিযোগ করেন, ‘টাঙ্গাইল পর্যন্ত নরমাল ভাড়া ১৫০ টাকা, এখন বাসের লোকজন ৪০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। ৪০০ টাকা ছাড়া বাসে ওঠাবেই না।’
সড়কে যানজটের কারণে সময় ও গাড়ির জ্বালানির অপচয়, ফেরার সময় পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় বাড়তি ভাড়ার নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ফেরার সময়কালের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে দাবি করেছেন পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেলফি পরিবহনের চালকের সহযোগী আমির আলী বলেন, ‘যাওয়ার সময় গাড়ি ভইরা (যাত্রীপূর্ণ) যাই। আসার সময় খালি আসতে হয়। আবার জ্যামে পইড়া থাকতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে একটু বেশি ভাড়া নেওয়া হয়।’
শনিবার যানজটের আশঙ্কা
এদিকে আজ বিকেল পর্যন্ত সড়কে যানজট কম থাকার বিষয়ে শিল্পকারখানাগুলো ধাপে ধাপে এক দিন পরপর ছুটি ঘোষণা করাসহ বেশ কয়েকটি কারণের কথা জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া আগামীকাল বড় ধরনের বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হবে, তাই আগামীকাল যানজটের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সাভার উপজেলার তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে গত বুধবার শতকরা ৮ শতাংশ, গতকাল ১৮ শতাংশ এবং আজ ৩০ শতাংশ ছুটি দেওয়া হয়। কাল শনিবার বাকি ৪৪ শতাংশ কারখানা ছুটির কথা রয়েছে।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন–চার দিন ধরে শিল্পকারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে এক দিন পরপর ছুটি ঘোষণা করেছে। সড়কে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। এসব কারণে মূলত সড়কে যানজট নেই। তবে আগামীকাল বেশ কয়েকটি বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করার কথা থাকায় যানজটের আশঙ্কা থাকলেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। আশা করছি সবাই বিগত দিনগুলোর মতো ভোগান্তি ছাড়াই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।’