ভেন্যু ফেরতের দাবিতে সোচ্চার সর্বস্তরের মানুষ

বগুড়া জেলার ম্যাপ

বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে জনবল ও ভেন্যু ফেরত দেওয়ার দাবিতে খেলোয়াড় ও হাজারো সাধারণ মানুষ সোচ্চার হলেও নিশ্চুপ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও দলীয় সংসদ সদস্যরা। এদিকে ভেন্যু ফেরতের দাবিতে একজন যুবক তিন দিন ধরে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।

আলোচিত আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম ও ক্রিকেটার শফিউল ইসলামও ভেন্যু পুনর্বহালের দাবিতে মঙ্গলবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে নারাজ সদর আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান।

তবে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ভেন্যু ফেরতের বিষয়ে বিসিবির সভাপতি এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যানের ‘ইতিবাচক’ সাড়া মিলিছে বলে দাবি করেছেন বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম।

‘সবুজসংকেত’ পেয়ে বুধবার বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ভেন্যু পুনর্বহালের জন্য বিসিবি ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে নতুন করে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বুধবার দুপুরে বলেন, শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে শেখ কামাল যুব ক্রিকেটের ম্যাচ এবং প্রিমিয়ার লিগ আয়োজন নিয়ে বিসিবির সঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার যে ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে, ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে বিসিবিকে ইতিমধ্যেই আশ্বস্ত করা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হবে না।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, প্রিমিয়ার লিগ আয়োজন এবং ভেন্যু বাতিলের পর বিসিবিকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে পরপর দুই দফা যে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, সে বিষয়ে সংস্থার সভাপতি হিসেবে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। আবার যুব ক্রিকেটের ম্যাচ আয়োজনে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ তোলা হলেও এ বিষয়েও বিসিবি আমাকে কিছুই জানায়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এখন থেকে কোনো বিষয়ে কোথাও চিঠি দিতে হলে বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হলে সভা ডেকে সবার মতামত নিতে হবে।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্বে স্টেডিয়ামের মূল মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে স্টেডিয়ামটি হস্তান্তরের জন্য চিঠি দিয়েছে বিসিবি। গত বৃহস্পতিবার এনএসসি সচিব বরাবর পাঠানো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার ‘অসহযোগিতার’ কারণে বিসিবি শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে নিয়মিতভাবে লিগ ও টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারছে না। বিসিবি তাই রক্ষণাবেক্ষণসহ স্টেডিয়ামটির যাবতীয় দায়দায়িত্ব এনএসসির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই দিনই শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে কর্মরত বিসিবির ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় স্টেডিয়ামে বদলি করা হয়।

এ ছাড়া স্টেডিয়ামে থাকা রোলার, সুপার সপার, পিচ কাভারসহ মাঠ ও খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম এবং ড্রেসিংরুমের আসবাব ঢাকায় মিরপুর স্টেডিয়ামে নিয়ে যায় বিসিবি। এ ঘটনার পর বগুড়ার খেলোয়াড়, দর্শক, ক্রীড়া সংগঠকসহ সাধারণ মানুষ বিসিবির এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন।

বিসিবির এমন কঠিন সিদ্ধান্তের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বিসিবির সূচি অনুযায়ী শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত হওয়ার কথা শেখ কামাল জাতীয় যুব ক্রিকেট লিগের খেলা। এই সূচি পূর্বনির্ধারিত হলেও গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিসিবিকে চিঠি দিয়ে জানায়, ১ মার্চ থেকে স্থানীয় প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ শুরু হবে বলে যুব ক্রিকেটের জন্য মাঠ দেওয়া সম্ভব নয়। তারাও লিগের সূচি করেছে ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। এরপরই বিসিবি থেকে ভেন্যু বাতিলের ওই সিদ্ধান্ত আসে। এ সিদ্ধান্তের পর বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে বিসিবির কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্টো বিসিবির বিরুদ্ধেই শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম নিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তোলা হয়।

তবে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিসিবির চেয়ারম্যান এবং জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার চেয়ারম্যান ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। দুই পক্ষের মধ্যে ঘটে যাওয়া “অনাকাঙ্ক্ষিত” ভুল–বোঝাবুঝির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তাঁরা বগুড়া স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ভেন্যু ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বুধবার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভা করে কিছু সিদ্ধান্তের রেজল্যুশনসহ ভেন্যু পুনর্বিবেচনার চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত বিসিবি থেকে ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা আসবে।

সোচ্চার সর্বস্তরের মানুষ, নিশ্চুপ আ.লীগ
গত বৃহস্পতিবার বিসিবি ভেন্যু ও জনবল প্রত্যাহারের পর থেকেই নানা ব্যক্তি ও সংগঠন প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন। ভেন্যু বাতিলের প্রতিবাদে জেলা বিএনপিসহ নানা সংগঠন মানববন্ধন করেছে। কাফনের কাপড় পরে শহরের সাতমাথায় চার দিন ধরে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন মো. রুমেল নামে এক যুবক।

শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু বাতিলের বিষয়ে বিসিবির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা চেয়ে মঙ্গলবার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে মানববন্ধন করেছেন হিরো আলম। তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় দলের মুশফিকুর রহিম, শফিউল ইসলাম ও সদ্য দলে সুযোগ পাওয়া তৌহিদ হৃদয় জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের রিতু মনি, শারমিন সুলতানা ও খাদিজাতুল কুবরা, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য তানজিদ হাসান বগুড়া থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার। অথচ একশ্রেণির লোক সিন্ডিকেট হয়ে কাজ করছে। তারা চায় না বগুড়া স্টেডিয়াম থাক।


চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু বাতিল এবং মালামাল সরানো নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) সমালোচনা করে হিরো আলম মালামাল ফেরত চেয়ে মাঠটিতে আগের মতো খেলা চালুর দাবি জানান। তাঁর এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন সেখানে থাকা ক্রিকেটার শফিউল ইসলামও। তবে এ নিয়ে চুপচাপ বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। স্টেডিয়ামে ভেন্যু বাতিলের বিষয়ে নেই তাঁদের তৎপরতা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরাও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। সদর আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর কুমার রায় বলেন, শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ভেন্যু বাতিলের বিসিবির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে জেলা আওয়ামী লীগ চুপচাপ আছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান বিষয়টি নিয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং বিসিবির সভাপতির সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন। ভেন্যু ফেরত পাওয়ার বিষয়ে তাঁরা নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন।