গোমতীর চরে কৃষকের মুখে ‘মিষ্টি হাসি’ এনেছে মিষ্টিকুমড়া
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় গোমতী নদীর ভান্তির চরে চোখে পড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। এই সবুজের মধ্যে হাসছে মিষ্টিকুমড়া। হাত দিয়ে পাতা সরাতেই পাতার ফাঁকে লুকিয়ে থাকা মিষ্টিকুমড়া বেরিয়ে আসছে। পুরো চরের প্রায় সব কৃষিজমিতেই এ অবস্থা। এ বছর মিষ্টিকুমড়ার ভালো ফলনে খুশি কৃষক।
বুধবার সরেজমিনে ভান্তির চরের পাশাপাশি বালীখাড়া, কাহেতরা ও পূর্ব হুরা চরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব মিষ্টিকুমড়া জমিতে একসঙ্গে দুই ফসলের একটি। গত নভেম্বরের শুরুতে এসব জমিতে একসঙ্গে আলু ও মিষ্টিকুমড়ার চারা রোপণ করা হয়। এরই মধ্যে ডিসেম্বরের শেষ দিকে এবং জানুয়ারির শুরুতে আলু তুলে নিয়েছেন কৃষকেরা। এখন প্রতিটি জমিতে শুধুই মিষ্টিকুমড়া। এ বছর মিষ্টিকুমড়ার ভালো ফলনের কারণে হাসির ঝিলিক লেগেছে কৃষকের মুখে।
জেলা কৃষি বিভাগ ও চরের কৃষকদের ভাষ্য, গত বছরের আগস্টে হওয়া ভয়াবহ বন্যায় গোমতী নদীর চর পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছিল। বানের স্রোতে ভেসে যায় চরের সব কৃষিজমির ফসল। তবে বন্যার সময় চরের কৃষিজমিগুলোতে প্রচুর পলি জমেছিল। বন্যা–পরবর্তী সময়ে আবাদ করায় কৃষিজমির পলির কারণে মিষ্টিকুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। শুধু মিষ্টিকুমড়াই নয়, এ বছর আলুরও ভালো ফলন হয়েছে গোমতীর চরে।
ভান্তির চরে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক মিষ্টিকুমড়া তুলে রাখছেন খেতের আলে। এরপর কাঁধে করে এসব মিষ্টিকুমড়া কৃষকেরা নিয়ে যাচ্ছেন গোমতীর বেড়িবাঁধ সড়কে। সেখান থেকে বিক্রির জন্য এসব মিষ্টিকুমড়া চলে যাবে বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। এসব মিষ্টিকুমড়ার প্রতিটি খেত থেকে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন কৃষক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীরা চরে এসে মিষ্টিকুমড়া কিনে পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
চরের কৃষক ভান্তি গ্রামের মো. মানিক এ বছর ২৬ শতাংশ জমিতে একসঙ্গে আলু ও মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছেন। পাশাপাশি ৩৬ শতাংশের একটি জমির আলু ও মিষ্টিকুমড়ার খেত কৃষকের কাছ থেকে এক লাখ টাকায় কিনেছেন তিনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের বন্যায় চরের কৃষিজমিতে পলি জমেছে। পাশাপাশি অতীতে জমির যত দূষণ ছিল, সেগুলোও পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ কারণে এ বছর চরে ভালো ফসল হয়েছে কৃষকদের। তাঁর ২৬ শতাংশ জমিতে আলু ও মিষ্টিকুমড়া চাষ করতে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। এরই মধ্যে তিনি ৩০–৩৫ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছেন। আশা করছেন, ৪০–৫০ হাজার টাকার মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করতে পারবেন।
চরের আরেক কৃষক মোস্তফা মিয়া বলেন, গোমতী চরের এই মিষ্টিকুমড়া দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজির পাইকারি বাজার কুমিল্লার নিমসার হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। গত বছরের বন্যায় চরের ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষি বিভাগ থেকে তাঁরা কোনো সহায়তা পাননি। তবে এবার ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে, এমন আশা তাঁর।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোমতীর চরে কয়েকটি হাইব্রিড জাতের মিষ্টিকুমড়ার চাষ বেশি হয়েছে। এর মধ্যে আছে মোহনা, পিরিতি সুপার, অনিক-১, ওয়ান্ডার বলসহ কয়েকটি হাইব্রিড জাতের মিষ্টিকুমড়া।
বালীখাড়া এলাকার বাসিন্দা মামুন মিয়া বলেন, ‘আমরার আশপাশের এলাকাডির চরের মইধ্যে এহন খালি কুমড়া আর কুমড়া। এই বছর মিষ্টিকুমড়ার বাম্পার ফলন হইছে। কয়েক দিন আগ থ্যাইক্কা বেচন শুরু হয়েছে। আরও এক-দেড় মাস এই কুমড়া বেচাবিক্রি হইব। আমরা চরে কোনো মাচা ব্যবহার করি না। মাটির মইধ্যে গাছের লগে মিষ্টিকুমড়া বড় হয়। এইবার ভালা ফলন হওনে কৃষকরা খুশি। আশা করতাছি, কিছুদিনের মইধ্যে দাম আরও কিছুটা বাড়ব।’
এ প্রসঙ্গে জানতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়া ভালো এবং বন্যায় চরের কৃষিজমিতে পলি জমার কারণে এ বছর গোমতীর চরে মিষ্টিকুমড়া ও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের বন্যার পর কৃষি বিভাগ থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত যে কৃষকদের সহায়তা করা হয়েছে, সেই তালিকায় চরের আলু ও মিষ্টিকুমড়ার চাষিরা ছিলেন না। ফলে তাঁদের সহায়তা দেওয়া যায়নি। তবে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন।