ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’: মেঘে ঢেকে আছে খুলনার আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে কালো মেঘে ঢেকে আছে খুলনার আকাশ। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায়ও আকাশে ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাব, পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে তা ঝরছে মাঝারি আকারে, তবে বাতাস নেই। অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে। বিকেলের দিকে শুরু হয় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেঘ ও বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে।
আজ সকালে খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’–তে রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে খুলনাসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। আগামীকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টির এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এর প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ বিকেল থেকে রাতের মধ্যে মিধিলি খুলনার উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করবে।
মিধিলির প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে খুলনা জেলা প্রশাসন। গতকাল বিকেলে প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবক ও আশ্রয়ণকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসিন আরেফীন প্রথম আলোকে বলেন, খুলনার ১০টি উপজেলার মধ্যে উপকূলীয় ৫টি উপজেলায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসব উপজেলার ইউএনওদের সতর্ক থাকতে ও শুকনা খাবার কিনে রাখতে বলা হয়েছে। যেকোনো সময় জরুরি মুহূর্তে সেবা দেওয়া জন্য সবকিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আজ সকালে খুলনা নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় সড়কগুলো অনেকটা ফাঁকা। মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি খুবই কম। কিছুটা ঠান্ডা আবহাওয়ায় খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তবে মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে মানুষকে আয়েশ করে বসে থাকতে দেখা গেছে। এই আবহাওয়ার মধ্যেও নগরের অনেক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। হরতাল-অবরোধের ক্ষতি কাটিয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার বাধ্যবাধকতার কারণে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খুলনা জেলায় ৯৪ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। মাঠে থাকা অধিকাংশ ধান আধা পাকা। আগামী এক মাসের মধ্যে সেগুলো ঘরে ওঠার কথা। এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের প্রভাব বেশি থাকলে ধানের গাছ মাটিতে পড়ে ক্ষতির আশঙ্কা আছে। অন্যদিকে কৃষকেরা খেতে শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করছেন। বৃষ্টির পরিমাণ বেশি থাকলে ওই চারাও মারা যেতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের অধিকাংশই মেরামত করা হয়েছে উল্লেখ করে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কিছু জায়গায় মেরামতের কাজ চলছে। বড় কোনো দুর্যোগ না হলে আপাতত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।