কুমিল্লায় বীরচন্দ্র পাঠাগারে ভাঙচুর-লুট, পুড়ে গেছে অনেক বই

কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণপাঠাগারে বুকসেলফ ভাঙচুর করা হয়েছে। মেঝেতে পড়ে আছে বইপত্র। আজ বুধবার তোলাছবি: এম সাদেক

কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনে (টাউন হল) হামলা হয়েছে। সেখানে বইপত্র লুট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বিজয় মিছিল থেকে সেখানে হামলা করা হয়।

গত সোমবার দুপুরের পর কুমিল্লা শহরে বিজয় মিছিল বের করা হয়। নগরের কান্দিরপাড়ে উল্লাসে মেতে উঠে লোকজন। তখন একদল বিক্ষুব্ধ লোক বীরচন্দ্র গণপাঠাগারের প্রবেশ করে। প্রথমে তাঁরা কেয়ারটেকারের কক্ষে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে কিছু বই পুড়ে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার করা হয়। পরে লোকজন দ্বিতীয় তলায় প্রবেশ করে ভাঙচুর করে। লুট করে নিয়ে যায় অনেক বই। এসব বইয়ের অনেকগুলো অন্তত দুই শ বছর আগে মুদ্রণ করা হয়েছিল।

বীরচন্দ্র গণপাঠাগারের কেয়ারটেকার রঞ্জিত জানান, গত সোমবার দুপুরে তিনি দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বাইরে যান। তারপর শোনেন পাঠাগারে হামলা হয়েছে। আগুনে তাঁর কক্ষ পুড়ে গেছে। অনেক বইও পুড়ে গেছে।

আজ বুধবার বেলা ১১টায় বীরচন্দ্র গণপাঠাগারে গিয়ে দেখা যায়, কেয়ারটেকারের কক্ষে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দোতলায় সব কটি আলমারি ভেঙে পড়ে আছে। অনেক ম্যাগাজিন ও বেশ কিছু বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
ওই ঘটনার পর পাঠাগারের সদস্যসহ গণমান্য ব্যক্তিরা সেখানে যাচ্ছেন। শাহ মোহাম্মদ সেলিম জানান, ‘বইগুলো আমাদের কুমিল্লার সম্পদ। এগুলো যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা যেন স্ব-উদ্যাগে লাইব্রেরিতে ফিরিয়ে দেন।’ একই দাবি জানান বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক।

এ গুলো (বই) শুধু কুমিল্লার জন্য নয়, সমগ্র বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। বইগুলো যাঁরা লুট করেছেন, তাঁরা যেন দয়া করে বইগুলো ফিরিয়ে দেন।
আহসানুল কবীর, লেখক ও গবেষক

পাঠাগারের লুট করা বই ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, লালমাই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান, সিপিবি নেতা শেখ আবদুল মান্নান, বিকাশ চন্দ্র দেব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খায়রুল আনাম রায়হান, ঐতিহ্য কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

লেখক ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, এখানে ১০০ বছর আগের বই আছে পাঁচ হাজারের বেশি। এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকার প্রথম সংখ্যা থেকে প্রায় সব কটি সংখ্যাই ছিল। এখানে মহাকবি ফেরদৌসির রচিত শাহানামার প্রথম সংস্কারণের কপি আছে। আধি রাজমালার প্রথম সংস্করণেরও কপি আছে। অনেকগুলো পুঁথি আছে। এ গুলো শুধু কুমিল্লার জন্য নয়, সমগ্র বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। বইগুলো যাঁরা লুট করেছেন, তাঁরা যেন দয়া করে বইগুলো ফিরিয়ে দেন।