পরিবেশকের নামে এলপিজি খালাস করছিল কে, তদন্তে কমিটি

এলপিজি গ্যাসপ্রতীকী ছবি

মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী দুই পরিবেশককে না জানিয়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাস বিক্রির ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল)। আজ সোমবার দুপুরে দুই সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়। সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কোম্পানির ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) কামরুল হোসেনকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্যসচিব হিসেবে আছেন সহকারী ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মোহাম্মদ ইলিয়াছ। তদন্ত কমিটির বিষয়ে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনা আমরা তদন্ত করে দেখব। এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

এর আগে গতকাল রোববার প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘পরিবেশক জানেন না, তাঁদের নামে খালাস হয় এলপি গ্যাস’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর গতকালই কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম।

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বা এসএওসিএল হলো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। ১৯৬৫ সালে এটি চালু হয়। শুরুতে যানবাহনের ইঞ্জিন অয়েল উৎপাদিত হতো এ প্রতিষ্ঠানে। পরবর্তী সময়ে বিটুমিন, এলপিজি, ফার্নেস তেল, ডিজেল বিপণনের দায়িত্বও দেওয়া হয়।

এ কোম্পানি থেকে এলপি গ্যাস কিনে ব্যবসা করে মেসার্স ডি ভি গ্যাস সাপ্লাই ও মেসার্স সাগরিকা এজেন্সি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। এই দুই প্রতিষ্ঠানেরই বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে নেওয়া লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। কিন্তু তাদের অজান্তেই প্রতিষ্ঠানের নামে গ্যাস সিলিন্ডার খালাস হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির স্বত্বাধিকারীরা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর তদন্তের আবেদনও করেছেন।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে নেওয়া মেসার্স ডি ভি গ্যাসের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। আর মেসার্স সাগরিকা এজেন্সির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের মার্চে। নিয়ম অনুযায়ী, লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে এলপি গ্যাস বিক্রি করা যায় না।

ডি ভি গ্যাস সাপ্লাইয়ের কার্যালয় চট্টগ্রাম নগরের কদমতলী এলাকায়। আর মেসার্স সাগরিকা এজেন্সির কার্যালয় নগরের উত্তর হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজার এলাকায়।

সূত্র জানায়, এসএওসিএল থেকে ডি ভি গ্যাসের নামে সর্বশেষ চালানটি খালাস হয়েছে গত ১৯ সেপ্টেম্বর। এদিন ২৫টি এলপি সিলিন্ডার বের হয়। তবে ডি ভি গ্যাসের নামে সিলিন্ডার বের হলেও প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী পঙ্কজ মালাকার বিষয়টি জানেন না। তিনি সিলিন্ডার নেওয়ার জন্য আবেদনও করেননি। সম্প্রতি বিষয়টি জানার পর তিনি ২ ডিসেম্বর এসএওসিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম বরাবর একটি আবেদন করেছেন। এতে তিনি গত দুই বছরে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামে কয়টি সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে, সে হিসাব চেয়েছেন।

অন্যদিকে মেসার্স সাগরিকা এজেন্সির নামে সর্বশেষ ২৬ নভেম্বর ২৫টি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বের হয়েছে। চালান নম্বর ৩৭৯৬। তবে কে সিলিন্ডার উত্তোলন করেছেন, তা জানেন না প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি আর কোম্পানিতে গ্যাস সিলিন্ডার নেওয়ার জন্য যাননি। তবে সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন, তাঁর অজান্তেই প্রতিষ্ঠানের নামে গ্যাস সিলিন্ডার বের হচ্ছে। এ জন্য ৪ ডিসেম্বর তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়ে তদন্তের আবেদন করেছেন।