সকাল থেকে বৃষ্টি। আশঙ্কা ছিল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে। সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সকাল ৯টার দিকে শরীয়তপুর পৌরসভা মিলনায়তন চত্বর কৃতী শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। অনেকে দল বেঁধে ছবি তোলে। অনেকে তোলে সেলফি।
এভাবেই আজ মঙ্গলবার শরীয়তপুরে শিখো ও প্রথম আলোর আয়োজনে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৃথক বুথ থেকে বন্ধুসভার সদস্যদের কাছ থেকে স্ন্যাকস ও ক্রেস্ট সংগ্রহ করে। সকাল ১০টার সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শরীয়তপুরের নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাকসুদা খাতুন, শরীয়তপুর জেলা শহরের পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরে আলম, ফরিদপুরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক প্রবীর কান্তি বালা ও শরীয়তপুরে প্রথম আলোর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি শাহীন সরকার। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন শরীয়তপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা।
জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যক্ষ মাকসুদা খাতুন বলেন, ‘তোমরা পরিবারের প্রতি যত্নশীল হবে। পারিবারিক বন্ধন মজবুত করবে। একজন শিক্ষার্থীকে সফল করতে পরিবারের সদস্যরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, জীবনে সফল হতে হলে সব ক্ষেত্রে সৎ থাকতে হবে। জীবনে কখনো অসৎ হওয়া চলবে না। জীবনে অসৎ হলে মেধা মূল্যহীন। অনেক ত্যাগের বিনিময় বাংলাদেশ অর্জন করেছি। সে অর্জন অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। ভালো মানুষ হওয়া, সৎ জীবন গড়ে তোলা, মাদকমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের কঠিন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাদকবিরোধী শপথবাক্য পাঠ করান মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ আল হোসাইন। তিনি বলেন, ‘মাদক জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তোমাদের কোনো ভুল সিদ্ধান্তে যেন জীবনের কোনো বড় ক্ষতি না হয়। আর মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ে। তোমরা লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যাও। সফলতা তোমার হাতের মুঠোয়।’
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পর্বে বন্ধুসভার বন্ধু সোহেল মীরমালতের নেতৃত্বে ১৬ জন নৃত্যশিল্পী নৃত্য পরিবেশন করেন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থী লামিছা একটি দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে।
নিজের অনুভূতি জানিয়ে বক্তব্য দেয় মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত ও জাজিরা মোহর আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম। সুমাইয়া তার বক্তব্যে বলে, ‘আমার মা হোসনে আরা বেগম গ্রামের সাধারণ গৃহবধূ। কিন্তু তিনি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজয়ী করতে চান। আমার সাফল্যের পেছনে তিনি সীমাহীন শ্রম ও সময় দিয়েছেন। আমরা মাকে ভালোবেসে সৎ ও আদর্শ জীবন গড়ব। মায়ের মতো দেশকে ভালোবেসে সব অন্যায় ও অবিচার দূর করব।’
সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। শরীয়তপুরে এই উৎসবে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছে ১৬৭ জন কৃতী শিক্ষার্থী।
দিনব্যাপী সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, সনদ, প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস বক্স।