চুরি ঠেকাতে খেজুরগাছের রসের হাঁড়িতে তালা দিয়েছেন হারুন গাছি

চুরি ঠেকাতে ছোট ও নিচু গাছে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শরীয়তপুরের গোসাইরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহিষকান্দি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

প্রায় ৪০ বছর ধরে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ করেন গাছি হারুন অর রশিদ। তাঁর এলাকায় খেজুরের রস চুরির উপদ্রব বেড়ে গেছে। তাই তিনি চুরি ঠেকাতে খেজুরগাছের সঙ্গে শিকল জড়িয়ে রসের হাঁড়িগুলোকে শিকল দিয়ে তালা লাগিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছেন।

হারুন অর রশিদ শরীয়তপুরের গোসাইরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহিষকান্দি এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুরগাছ বিলুপ্তির পথে। তাই খেজুরের রস ও খেজুরের গুড় দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা রসের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আর প্রতি কেজি গুড়ের দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় পাওয়া যায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দামে। এমন পরিস্থিতিতে হারুন যেসব গাছ কেটে খেজুর রস সংগ্রহ করেন, সেখান থেকে মাটির হাঁড়িসহ রস চুরির ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলার মহিষকান্দি এলাকাটি জয়ন্তীয়া নদীর তীরে অবস্থিত। সেখানে হাটুরিয়া ও উত্তর হাটুরিয়া গ্রামে ১২৮টি খেজুরগাছ থেকে নিয়মিত রস সংগ্রহ করেন হারুন। চুরি ঠেকাতে তুলনামূলকভাবে নিচু ও ছোট এমন ৫০টি খেজুরগাছের হাঁড়িতে তালা লাগিয়েছেন তিনি।

হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। কখনো চোরের এমন উপদ্রব দেখিনি। গত বছরই চোরের উপদ্রব বেশি হয়েছে। এরপর গাছের সঙ্গে রসের হাঁড়ি তালা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করছি। এখন চোরেরা রস চুরি করে হাঁড়ি ভেঙে রেখে যায়। প্রতিটি গাছের জন্য হাঁড়ি, শিকল ও তালা কিনতে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আমি গরিব মানুষ, এভাবে চোরের উপদ্রব বাড়তে থাকলে এ পেশাটাই ছেড়ে দিতে হবে।’

খেজুরগাছের সঙ্গে লোহার শিকল পেঁচিয়ে রসের হাঁড়িতে লাগানো হয়েছে তালা
ছবি: প্রথম আলো

হারুন জানান, প্রতিবার কাটার পর একটি খেজুরগাছ থেকে তিন থেকে চার কেজি রস পাওয়া যায়। দুই দিনে এই রস সংগ্রহ করা হয়। রসের অর্ধেক নেন তিনি (হারুন) আর বাকি অর্ধেক পান গাছের মালিক। রস নিয়ে প্রতিদিন সকালে গোসাইরহাট উপজেলা সদরে বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতি কেজি রসের দাম ১০০ টাকা।

মহিষকান্দি এলাকার বেলায়েত হোসেন নামের এক ব্যক্তির দুটি খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন হারুন। বেলায়েত বলেন, ‘নভেম্বর মাস থেকে খেজুরগাছে রস কাটার কাজ শুরু হয়। যাঁরা খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন, আমাদের অঞ্চলে তাঁদের গাছি নামে ডাকা হয়। এ এলাকায় ইটের ভাটার কারণে খেজুরগাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’

গোসাইরহাট পৌরসভার সচিব আবদুল আলিম মোল্যা বলেন, গোসাইরহাট পৌরসভার অধিকাংশ এলাকাই গ্রামাঞ্চল। সেখানে সড়কবাতিও লাগানো হয়নি। নদী–তীরবর্তী ও কিছুটা নির্জন গ্রাম হওয়ায় সেখানে রাতে চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। খেজুরগাছের রস চুরির ঘটনা দুঃখজনক। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে খেজুরগাছের রস চুরির ঘটনা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।