মাদারীপুরে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিসহ দুজন গ্রেপ্তার

মাদারীপুরে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি হোসেন সরদার। বুধবার দুপুরে বরিশালে র‌্যাব-৮ কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে বালুর ব্যবসা ও হাট ইজারা নিয়ে বিরোধের জেরে মসজিদে ঢুকে প্রকাশ্যে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হোসেন সরদার (৬০) ও সুমন সরদার (৩৩)। হোসেন সরদার এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার ভোরে ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন চিত্রাশাইলের কাঁঠালতলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে হোসেন সরদারকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৮ ও ৪-এর যৌথ দল। এ ছাড়া র‍্যাব-৮-এর সদস্যরা পৃথক অভিযান চালিয়ে শরীয়তপুরের পালং ইউনিয়নের আরিগাঁও এলাকা থেকে সুমন সরদারকে গ্রেপ্তার করেন। হোসেন সরদার মাদারীপুর সদরের খোয়াজপুর গ্রামের বাসিন্দা। সুমন সরদার একই উপজেলার বাবনাতলা গ্রামের বাসিন্দা।

অবৈধভাবে বালু ব্যবসা ও ইজারা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ৮ মার্চ সকালে মাদারীপুর সদরের খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার, তাঁর ভাই আতাউর সরদার এবং তাঁদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালান। এ ঘটনায় ৪৯ আসামির নাম উল্লেখ করে এবং ৮০ থেকে ৯০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি মামলা করা হয়।

আজ দুপুরে বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় র‍্যাব-৮–এর আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসামি গ্রেপ্তারে অভিযানের তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন গণমাধ্যম শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক অমিত হাসান।

র‌্যাব কর্মকর্তা অমিত হাসান বলেন, মাদারীপুর সদরের খোয়াজপুর ইউনিয়নের কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং ইজারা নিয়ে সাইফুল সরদার ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে আসামিদের পূর্ববিরোধ ছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রধান আসামি হোসেন সরদারের নেতৃত্বে প্রায় দেড় শ ব্যক্তি ৮ মার্চ সকালে চাপাতি, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, ছেদা, লাঠিসহ দেশি বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে সাইফুল সরদারের বাড়িতে হামলা করেন। এ সময় সাইফুল ও তাঁর ভাইয়েরা প্রাণরক্ষায় সরদারবাড়ি জামে মসজিদে আশ্রয় নেন। আসামি হোসেন সরদারের নির্দেশে সহযোগী সুমন সরদারসহ অন্য আসামিরা মসজিদে ঢুকে তাঁদের ওপর হামলা করেন। হামলার সময় আসামিরা চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালান। সাইফুল সরদার, তাঁর ভাই আতাউর সরদারসহ কয়েকজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যান আসামিরা। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে মাদারীপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাইফুল সরদার ও আতাউর সরদারকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত অলিল সরদার, পলাশ সরদার ও তাজেল হাওলাদারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পলাশ সরদার (১৭) মারা যায়। পলাশ সরদার নিহত সাইফুল ও আতাউরের চাচাতো ভাই।

এ ঘটনায় ৪৯ আসামির নাম উল্লেখ করে এবং ৮০ থেকে ৯০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। নিহত সাইফুল ও আতাউর সরদারের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন।