সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিবকে শ্যামনগরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, একাংশের প্রতিবাদ

সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল আলিম

সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি সদস্যসচিব আবদুল আলিমকে শ্যামনগরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি একক সিদ্ধান্তে বিলুপ্ত ঘোষণা করে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলা ও পৌর বিএনপির একাংশের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, আবদুল আলিমকে শ্যামনগরের মাটিতে পা রাখতে দেওয়া হবে না। তিনি এখানে আসার চেষ্টা করলে তাঁকে প্রতিহত করা হবে। তবে এ ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা বিএনপির সদস্যসচিবের অনুসারী বিএনপির অপর একটি পক্ষ।

স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, ১৯ জানুয়ারি শ্যামনগর উপজেলা ও শ্যামনগর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সোলায়মান কবীরকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং গোলাম আলমগীরকে সদস্যসচিব করা হয়। অন্যদিকে শেখ লিয়াকত আলীকে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এবং শামছুজ্জোহাকে সদস্যসচিব করা হয়। তবে ওই কমিটি প্রকাশ পাওয়ার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করেন কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া ও পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা। এ নিয়ে শ্যামনগরে কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি মিছিল–সমাবেশ করা হয়। এর মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল আলিম উভয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেন।

নেতা-কর্মীরা জানান, বিএনপি নেতা সোলায়মান কবীরের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ উপজেলা ও পৌর বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের এম এম প্লাজার পাশে কৃষক দলের কার্যালয়ের সামনে আনন্দমিছিল ও সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। একই জায়গায় বেলা দুইটায় ৩১ দফার পক্ষে কর্মশালা ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি নেতা আবদুল ওয়াহেদের নেতৃত্বে আরেকটি অংশ। আবদুল ওয়াহেদ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল আলিমের অনুসারী। একই জায়গায় দুই পক্ষের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে বিকেল চারটার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন ১৪৪ ধারা জারি  করেন। ১৪৪ ধারা চলাকালে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপজেলার ইসমাইলপুর এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ, আনসার সদস্যসহ ২০ জন আহত হন।

এর আগে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলা সদরের হায়বাদপুর মোড়ে সংক্ষিপ্ত সভায় নতুন কমিটির আহ্বায়ক (সাবেক সাধারণ সম্পাদক) সোলায়মান কবীর বলেন, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল আলিম শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে একক সিদ্ধান্তে একবার কমিটি পরিবর্তন করছেন। আবার বিলুপ্ত ঘোষণা করে শ্যামনগরে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়েছেন। সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

ওই ঘোষণা আসার পর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল আলিমের অনুসারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদের পক্ষ আজ বেলা ১১টায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে সকাল ১০টার দিকে তা স্থগিতের ঘোষণা দেয়।

জানতে চাইলে আবদুল ওয়াহেদ বলেন, তাঁর পক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ১৪৪ ধারা জারি করার পর তাঁরা বাড়িতে ফিরে যান। তাঁদের অপর পক্ষ গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মিছিল নিয়ে তাঁদের এক নেতার বাড়িতে হামলা করে। এ সময় তাঁদের ৮-১০ জন আহত হন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল আলিমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে অন্যায়ভাবে। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

আবদুল ওয়াহেদ আরও বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার শ্যামনগরের ১২টি ইউনিয়নে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য আবদুল আলিম শ্যামনগরে আসার কথা। ওই কর্মসূচি বাতিল করার জন্য গতাকল পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটানো হয়েছে।

বিএনপির একাংশের নেতা সোলায়মান কবীর অভিযোগ করে বলেন, শ্যামনগরে এই পরিস্থিতি জন্য জেলা বিএনপির সদস্যসচিব দায়ী। গতকাল ইসমাইলপুরে বিএনপি নেতা আশেক-ই-এলাহির বাড়ি থেকে তাঁদের সমর্থক নেতা-কর্মীর ওপর বিপক্ষের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। এতে ১০-১২ জন আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে সংসদীয় এলাকা-৪–এর টিম প্রধান ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল আলিম জানান, কেন্দ্রের নির্দেশে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। একটি পক্ষ ওই কমিটি বিলুপ্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়াচ্ছে। আজ তাঁর শ্যামনগরে যাওয়ার থাকলেও সেখানে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।