আমরা হয়তো আর বেশি দিন নেই, আগামীতে চোরদের নির্বাচন করিয়েন না: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

ভোলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ঘাট পরিদর্শনের পর স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। শনিবার দুপুরেছবি: সংগৃহীত

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘আমরা হয়তো আর বেশি দিন নেই। আগামী নির্বাচনে কোনো চোরদের নির্বাচন করিয়েন না। আপনারা সব দেখেছেন এবং জানেন। আমার দুঃখ লাগে, এ দেশের কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। এই টাকাগুলো দেশে থাকলে দেশ অনেক উন্নত হতো।’

আজ শনিবার দুপুরে ভোলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ঘাট পরিদর্শনের পর স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এর আগে একই উপজেলার রামনেওয়াজ ঘাট পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।

মতবিনিময় সভায় এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে বিচ্ছিন্ন মনপুরা উপজেলায় নদীভাঙন বন্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে। কিন্তু এখনো মনপুরায় নদীভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি।...এই দেশের কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। এই টাকাগুলো দেশে থাকলে দেশ অনেক উন্নত হতো। এখন কোনো উন্নয়ন করতে গেলে চিন্তা করতে হয়। দুর্নীতি তাদের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে।’ এ জন্য আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, ভোলার চারপাশে নদী। এই দ্বীপ জেলা ভোলায় যে ঘাটগুলো আছে, তা মানসম্পন্ন ও পর্যাপ্ত নয়। ঘাটগুলোতে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বেশ কিছু ঘাটের পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। ভোলার লঞ্চঘাটগুলোতে যাত্রীছাউনিসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। যাতে ঝড়-বৃষ্টিতে লঞ্চের যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে না হয়।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে মনপুরা উপজেলার কলাতলী ইউনিয়নের ঢালচরে নতুন একটি লঞ্চঘাটের উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন বলতে যেটা বোঝায়, সেটি হচ্ছে প্রান্তিক অঞ্চলের উন্নয়ন। বিগত দিনে প্রান্তিক অঞ্চলের উন্নয়ন হয়নি। বিগত সরকারে যারা ছিল, তারা নিজেদের মধ্যে টাকা লুটপাট করার জন্য বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তাই প্রান্তিক অঞ্চলের উন্নয়ন হয়নি। ফলে দেশেরও উন্নয়ন হয়নি।’

মতবিনিময় সভায় ও ঢালচরে লঞ্চঘাটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাবেক জ্বালানিসচিব মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান, মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাঠান মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান, মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান কবির, উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন বাচ্চু চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ভোলার দৌলতখান উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাট, তজুমদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী লঞ্চঘাট ও লালমোহন উপজেলার বাত্তিরখাল লঞ্চঘাট পরিদর্শন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভবিষ্যতে যারা সরকারে ক্ষমতায় আসবে, আশা করি তারা অতীত থেকে শিক্ষা নেবে। কী করলে কী হয়। আমরা যত দিন আছি, তত দিন লঞ্চঘাটগুলোতে অরাজকতা সৃষ্টি হতে দেব না। লঞ্চঘাটগুলোতে যে অরাজকতা হয়, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশেষ করে ঘাটের ইজারাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাঁচ টাকার ঘাটের টিকিটের স্থানে ১০ টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কেননা এখন আর আগের সেই স্বৈরাচারী সরকার নেই। স্বৈরাচারী সরকারের সময় যা খুশি তা করেছে, সেটা যেন এখন আর না হয়।’