বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে বাগেরহাটে ৮ বাড়িতে আগুন, আহত ২৫

নিজ দলের প্রতিপক্ষের দেওয়া আগুনে জ্বলছে বাগেরহাট সদরের বিষ্ণুপুর‌ ইউনিয়নের কুলিয়াদাইড় গ্রামে বিএনপি নেতার বাড়িঘর। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায়ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটে স্থানীয় আধিপত্য ও ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে ৮টি বসতঘর ভাংচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নারী-শিশুসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর‌ ইউনিয়নের কুলিয়াদাইড় গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। এর আগে বিকেল থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির দুই নেতা রুহুল আমিন ওরফে রুহুল মেম্বার ও মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা যায়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মধে৵ একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে এই বিরোধ চরমে পৌঁছায়। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে মারধর ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনার জেরে গতকাল দুপুরে ও বিকেলে উভয় পক্ষের লোকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে শতাধিক লোকজন রুহুল আমিন ও তাঁর সাত ভাইয়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। আগুনে রুহুল আমিনদের আটটি বসতঘরসহ গবাদিপশুর গোয়াল, হাঁস–মুরগির ঘর ও খড়ের গাদা পুড়ে গেছে।

রুহুল আমিন বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও মোস্তাফিজুর রহমান ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি।

সরেজমিনে গতকাল রাত আটটায়ও সেখানকার কয়েকটি ঘর ও খড়ের পালায় আগুন-ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। রুহুল আমিনসহ তার আট ভাইয়ের বসতঘরের ইটের দেয়াল টিকে থাকলেও ঘরের সব মাল পুড়ে গেছে। ঘরের মধে৵ টিভি, ফ্রিজ, আসবাব, মোটরসাইকেলসহ সব মালই পুড়ে গেছে। ঘরের বাইরেও হামলা-ভাঙচুরের ক্ষত দেখা যায়। গোয়ালঘর, হাঁস-মুরগির খোপ ও খড়ের গাদার আগুন তখনো পুরোপুরি নেভেনি।
রুহুলের পরিবারের সদস্যদের দাবি, কয়েক দিন ধরে মোস্তাফিজের লোকজন আমাদের মারধরের চেষ্টা করছিল। এর জন্য আমাদের পুরুষেরা গা ঢাকা দিয়েছিল। আর আজ বাড়ির মধ্যে এসে আমাদের সব শেষ করে দিয়ে গেল।

রুহুলের স্ত্রী বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর হামলা করে, বাড়িতে থাকা টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়।’ তিনি অভিযোগ করেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালামের লোক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ইমরান, কামরান, মাহবুব, মাসুমসহ স্থানীয় লোকজন তাঁদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মোস্তাফিজুর রহমান গ্রুপের নেতা বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুম মোল্লা বলেন, সোমবার রাতে ভাংচুর করা মোটরসাইকেল নিয়ে গতকাল দুপুরে থানায় যাচ্ছিল আমার ভাই মামুন মোল্লা। তখন রুহুলের লোকজন তার ওপর হামলা করেন। আমরা তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছিলাম। এরই মধ্যে বিকেলে আমার আরেক ভাই মাহমুদ মোল্লাকে কুপিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায় প্রতিপক্ষ। সন্ধ্যার দিকে তারা ঢাল–সড়কি নিয়ে আবারও বের হয়, তখন পুলিশও ছিল। এ সময় আমাদের লোকজন তাদের ধাওয়া করে, পরে তারা নিজেরা বাড়িতে আগুন দেয়।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। গেল পরশুও মারামারি হয়েছে। এর জেরেই গতকাল দুই পক্ষে আবার মারামারি করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।